ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সানির ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 9th, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানি সরকারের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং ওই ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এ মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদী কর্মসূচি চলাকালে হামলার শিকার হন সানি সরকার।
মানববন্ধনে সানির সহপাঠী মাসরুর ইসলাম বলেন, ‘ইসরায়েলের নির্মমতা ও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আয়োজিত কর্মসূচিতে সানি বলেছিলেন, “রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করবেন না। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে আন্দোলন করুন।” সানি বলেছিলেন, “এই কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের পতাকা উড়ালে বহির্বিশ্বে এটা অনেক খারাপভাবে উপস্থাপন করা হবে।” এরপরই ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের কিছু ছেলেপেলে তাঁর ওপর হামলা করেছে। এতে সানি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁর গলায় পাড়া দেওয়া হয়েছে, তাঁর পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন।’
মাশরুর ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের কয়েকজন নেতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই সিনিয়র ভাই। তাঁরা আমাদের ক্যাম্পাসেরই একজন ছাত্রকে ক্যাম্পাসের বাইরের ছেলেপেলেকে দিয়ে পেটানোর সাহস পেলেন, সেটা আমরা জানতে চাচ্ছি।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদুল ইসলাম বলেন, ‘সানির ওপর ন্যক্কারজনক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলাকারী কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন, কিছু বের হয়ে গেছেন। আমরা ছবি, ফুটেজ, স্ক্রিনশটসহ আহত সানিকে নিয়ে গতকাল ভিসি স্যারের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের দাবি, সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’
সানজিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ করব, এই সংগঠনের দেশের কোথাও যেন কোনো কার্যক্রম না হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিলা তালুকদার বলেন, ‘সানিকে বাঁচাতে গিয়ে বা প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ‘মবের’ স্বীকার হয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিজের ক্যাম্পাসে নিজের বাক্স্বাধীনতা প্রকাশ করতে গিয়ে কীভাবে মবের শিকার হন। তাঁকে মেরে ফেললে কী আপনারা (প্রশাসন) বলতেন, হামলার শিকার হয়েছে। তাঁর ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রব জ ঞ ন ব ভ গ র শ ক ষ র থ ন ষ দ ধ স গঠন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।”
চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।
২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা