পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির সোহাগের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিককে ‌‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

একটি প্রাইমারি স্কুলের চলমান কাজের তথ্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে হুমকি দেন। এ ধরনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী সাংবাদিক গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাউফল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।  

বুধবার (৯ এপ্রিল) বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, “জিডির বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়ছে। আদালত থেকে অনুমতি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরো পড়ুন:

সংবাদকর্মীদের ঈদ: অন্যদের তুলে ধরতে নিজেদের ভুলে থাকা

ডিআরইউয়ে হামলা: এক জনের জামিন, আরেকজন কারাগারে

এদিকে, ঘটনার একদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি যুবদল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছেন পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুইমাস আগে বাউফল পশ্চিম নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসী কয়েকদিন আগে ওই ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক দেশ রুপান্তরের বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমানকে জানান।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে সিদ্দিকুর রহমান ওই বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য যান। সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসার পর ওই ভবনের ঠিকাদার ও পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহাগ মোবাইল ফোনে সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমানকে হুমকি দেন। ওই অডিও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। 

ভাইরাল অডিওতে যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির সোহাগকে বলতে শোনা যায়, “আমি জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ১৭ বছর পর একটা কাম নিছি, হেই সাইটে আপনি কির লইগ্যা গেছেন। রড একটা হইবে না চারটা হবে, আপনি সাইটে গেছেন ক্যা? ১৭ বছর যুদ্ধ কইরা আইছি, আর আপনি এহন কন এইয়্যা অইয়্যা। অনিয়ম করলে আমনে কেডা সেইটা কন। অনিয়ম করলে অফিস দেখবে আপনে কেডা? টোপ‍ খাইতে চান, আমি আইতাছি দেইখ্যা নিমু। সাংবাদিকদের সাইটে কাজ কি? তুই সাংবাদিক, তুই থাকবি অন্য কামে তোর ওই জায়গায় কাজ কি? তুই সাইটের ধারে গেলে তোর কি করা লাগবে হেডা আমি বুঝমু হানে।” 

বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাংবাদিক মো.

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “কয়েকদিন ধরে স্থানীয়রা আমাকে জানান, ওই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। আমি মোবাইলে ওই বিদ্যালয়ের ঠিকাদার পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সোহাগের কাছে কাজের অনিয়মের সম্পর্কে বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করে কথা বলি। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার আমাকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জীবননাশের হুমকি দেন। আমি বিষয়টি আমার অফিস ও সিনিয়র সাংবাদিকদের জানাই। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে থানায় জিডি করি। এখন পর্যন্ত থানা কিংবা যুবদল থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”  

বাউফল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জলিলুর রহমান বলেন, “একটি দলের পরিচয় দিয়ে এভাবে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি। আমরা বাউফল প্রেস ক্লাব এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সাগংঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।” 

পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। সবাইকে সাংবাদিকদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, “বিষয়টি গতকালই আমরা সেন্ট্রাল কমিটিকে জানিয়েছি। আজও সেন্ট্রাল কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি, তার বিরুদ্ধে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ দ ক র রহম ন য বদল র য গ ম ক ব যবস থ ন বল ন ব উফল ঘটন র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার ৮ বছরেও নিজস্ব ভবন পায়নি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড 

ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুর চার জেলা নিয়ে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পার হলেও শিক্ষা বোর্ডটি এখনও পায়নি নিজস্ব ভবন। বর্তমানে নগরীর কাঠগোলায় পৃথক দু’টি ভাড়া ভবনে চলছে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম। শিক্ষা উপকরণ রাখার জন্য আরও তিনিটি আলাদা ভবন ভাড়া নেয়া হলেও এগুলোর অবস্থাও নাজুক। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভবন ১ ও ২ এর মধ্যবর্তী দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আবার গোডাউন গুলোর অবস্থানও নগরীর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। এতে দুই অফিস ও গোডাউনগুলোতে কাজ করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। 

তাছাড়া জনবল সংকটেও ধুকছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এখন পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। ১২২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি চলছে মাত্র ২২ জন কর্মকর্তা ও ১৯ জন কর্মচারী দিয়ে। স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে চার জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে খেতে হচ্ছে তাদের। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কাঠগোলা বাজারে অবস্থিত ভবন ১ এ কার্যক্রম চলে চেয়ারম্যান, সচিব, হিসাব ও আই টি শাখার। এই ভবনের নিচ তলায় গাদাগাদি করে থাকেন আনসার সদস্যরা। আর ভবন ২ এ আছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, স্কুল কলেজ পরিদর্শন শাখা। 

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দুটি মূল ভবন ও তিনটি গোডাউন বাবদ প্রতিমাসে ৭ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। শিক্ষা বোর্ডে নিজস্ব ভবন থাকলে বছরে কোটি টাকা ভাড়া বেঁচে যেত সরকারের। 

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. শহিদুল্লাহ যোগদান করেছেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে। তিনি সমকালকে জানান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ভবন তৈরির জন্য চারটি জমি প্রাথমিকভাবে দেখা হয়েছে। এরমধ্যে রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ১.৯৫ একরের একটি জমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ময়মনসিংহের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে ভিজিট করা হয়েছে। 

পরে প্রতি ফ্লোরে ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের ১০ তলা ভবনের চাহিদা দিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আট বছরে কেন নিজস্ব ভবন হয়নি শিক্ষা বোর্ডের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি এ বছরই বোর্ডে যোগদান করেছি। আগে জমি কেনা ও  ভবনের কাজ কেন হয়নি তা আগের চেয়ারম্যানরা বলতে পারবেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, ভবনে ১ ও ২ এ ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পরীক্ষার খাতা ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র নিতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই ভবন থেকে ওই ভবনে বারবার যাতায়াত করছেন। দুই ভবনের দূরত্ব ২ কিলোমিটার এবং গোডাউন গুলো আরও দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় এগুলো সংগ্রহ করতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। 

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দুই ভবন ও গোডাউনে দৌড়ঝাঁপ করে তাদের কাজের গতি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থায়ী বিল্ডিং জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদেরকে অফিসের কাজ সামলে বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে হয়। 

এসব সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর ড. দিদারুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভবনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন তারা।

জানা যায়, প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে আইটি শাখার কাজ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এক্ষেত্রে ফলাফল তৈরি ও রেজিস্ট্রেশন করার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। 

বোর্ড চেয়ারম্যান আরও জানান, আমরা চেয়েছিলাম এই পরিস্থিতিতে মূল দুটি ভবনকে একীভূত করতে। ভবন এক ছেড়ে দিয়ে ভবন ২ এর কাছাকাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে পারলে বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ও সেবা গ্রহীতাদের অনেকটা হয়রানি মুক্ত করা যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে এক নম্বর ভবনের থাকা আইটি শাখাকে ট্রান্সফার করে নতুন ভবনে নিয়ে যেতে অনেক টাকা খরচ হবে। এতে সরকার ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই চিন্তা করে নতুন কোন বাড়িভাড়াও নিতে পারছি না। 

জানা যায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে সরকারিভাবে বরাদ্দ একটিমাত্র গাড়ি বোর্ড চেয়ারম্যান ব্যবহার করছেন। বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত শিক্ষা বোর্ডের জন্য আরও দুইটি গাড়ি সরকারের কাছে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ থেকে কর্মকর্তারা নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর গেলে ভাড়া করা গাড়িতে তাদের যেতে হয়। 

তাছাড়া একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 

নিজস্ব ভবন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সমকালের সাথে কথা হয় বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর সৈয়দ আখতারুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষা বোর্ডকে ৩ একর জায়গা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান অতিরিক্ত অহংকার করে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে জমি কিনে নিজস্ব ভবন তৈরি করার মত পর্যাপ্ত টাকা বোর্ডের হাতে নেই। 

তবে বর্তমান চেয়ারম্যান নিজস্ব জমি ও ভবন তৈরি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সরকারের কাছে প্রকল্পের মাধ্যমে জমি কিনে ভবন তৈরি করে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্রুত সময়ের ভিতরেই নিজস্ব ভবনে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালাতে পারব বলে আশা করছি। 

চলতি বছরের ১৫ মার্চ ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের জমি কেনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাইট ভিজিটে যান ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। তিনি জানান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। নগরের বাইপাস মোড়ে ১.৯৫ একর জমি কেনার জন্য তারা আমাদেরকে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী জমি পরিদর্শন করে ২৩ মার্চ প্রধান প্রকৌশলী বরাবর আমি একটি রিপোর্ট পাঠাই। 

এখন শিক্ষা প্রকৌশল এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ