কক্সবাজারে মা কাছিমের মৃত্যু থামছে না, উপকূলজুড়ে নিষিদ্ধ জাল
Published: 9th, April 2025 GMT
কক্সবাজার সাগর উপকূলে মা কাছিমের মৃত্যু থামছে না। মাছ ধরার নিষিদ্ধ জালে আটকা পড়া অনেক কাছিম পিটিয়ে মারার পর সাগরে ফেলে দেন জেলেরা। জোয়ারের পানিতে এসব মৃত কাছিম ভেসে আসছে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে।
গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে সমুদ্রসৈকতের তিনটি পয়েন্টে চারটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছে। আগের দিন সোমবার ভেসে আসে আরও তিনটি। গত সাত দিনে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে মহেশখালী সোনাদিয়া পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার সৈকতের ৯টি পয়েন্টে অন্তত ৩৪টি মৃত কাছিম ভেসে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ভেসে আসা কাছিমের অধিকাংশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান পরিবেশবিষয়ক সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা। তিনি বলেন, মা কাছিমের মৃত্যুর অন্যতম কারণ শত কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলজুড়ে অন্তত ২০ হাজারের বেশি নিষিদ্ধ জাল (বেহুন্দি, ফাঁস ও কারেন্ট জাল) পুঁতে রাখা হয়েছে। এসব জালে কাছিম আটকা পড়ে। মাঝেমধ্যে কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ অভিযান চালিয়ে কিছু জাল জব্দ করলেও বেশির ভাগই অভিযানের আওতার বাইরে থাকা যায়।
বেসরকারি একটি সংগঠনের তথ্যমতে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে কক্সবাজার সৈকতের ৫০টির বেশি পয়েন্টে ভেসে আসে ২৪০টি মৃত মা কাছিম। সব কটি অলিভ রিডলে প্রজাতির। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পেটে ডিম ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সৈকতে ভেসে আসে দুটি অলিভ রিডলে প্রজাতির মৃত কাছিম। কয়েকটি কুকুর কাছিম নিয়ে টানাটানি শুরু করছিল। কাছিমের কিছুটা দূরে বালুচরে জাল সংস্কার করছিলেন কয়েকজন জেলে। মৃত কাছিমের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় জেলেরা কাছিম দুটি বালুতে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলেন।
স্থানীয় জেলে ছৈয়দ কামাল (৪৫) বলেন, প্রায় প্রতিদিন এই সৈকতে একাধিক মৃত কাছিম ভেসে আসে। সব কটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পেটে ডিম থাকে। বেওয়ারিশ কুকুর এসব ডিম খেতে মরিয়া হয়ে ছুটে। তিনি আরও বলেন, জালে আটকা পড়লে ট্রলারের জেলেরা কাছিমকে বরফ ভাঙার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। তারপর মৃত কাছিম সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। জেলেদের মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে, জালে কাছিম আটকা পড়লে নাকি সেই জালে আর মাছ ধরা পড়ে না। এই কারণে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা জসিম মাহমুদ জানান, গত সোমবার শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় তিনটি মৃত কাছিম ভেসে আসে। এর একটি জেটিঘাট এলাকায় এবং অপর দুটি গোলারচর সৈকতে ভেসে এসেছে। কাছিমগুলোর ওজন ২০-৩০ কেজি। কোনোটির পা নেই, কোনোটির শরীরের ওপরের অংশে (পিঠে) রক্তাক্ত জখমও দেখা গেছে।
মৃত কাছিমগুলো অলিভ রিডলে প্রজাতির জানিয়ে বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মৃত কাছিমগুলো বালুচরে পুঁতে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সমুদ্রের ময়লা-আবর্জনা ও আগাছা পরিষ্কার এবং মাছের পোনা খাদক জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে কাছিম। গভীর সমুদ্রের হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মা কাছিম ডিম পাড়তে ছুটে আসে কক্সবাজার উপকূলে। এ সময় সাগরে পুঁতে রাখা নিষিদ্ধ জালে আটকা পড়ে শত শত মা কাছিম মারা যাচ্ছে।
সম্প্রতি নেকমের একটি জরিপে দেখা গেছে, এখন মা কাছিম সৈকতের ৩৪টি পয়েন্টে ডিম পাড়ার সুযোগ পাছে। এক দশক আগে ৫২টি পয়েন্টে ডিম পাড়ত। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪০টির বেশি মৃত কাছিম ভেসে এসেছে। কাছিমগুলোর মৃত্যু না হলে অন্তত ৩০ হাজার ডিম পাওয়া যেত।
সাগরে ছাড়া হলো পাঁচ হাজার কাছিম ছানা
নেকমের দেওয়া তথ্যমতে, গত তিন মাসে সৈকতের ১২টি পয়েন্ট থেকে ২৬ হাজার ৯০০টি ডিম সংগ্রহ করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এরপর ডিমগুলো নেকমের সাতটি হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। এ পর্যন্ত ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে ৫ হাজার ৯৮টি। সব কটি ধাপে ধাপে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ডিমগুলো থেকেও কয়েক দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটবে।
৫ এপ্রিল বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে অবমুক্ত করা হয় ৫৫০টি কাছিম ছানা। নেকমের স্বেচ্ছাসেবক আলী জোহার বলেন, অবমুক্ত করা এসব কাছিম ছানার বয়স মাত্র দুদিন। ৯টি অলিভ রিডলে কাছিমের পাড়া ডিম থেকে এসব ছানা ফুটেছে।
কয়েক দফায় সেন্ট মার্টিন সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে ১৮৩টি কাছিম ছানা। বেসরকারি সামাজিক সংগঠন আমার সেন্ট মার্টিনের সমন্বয়ক আলী হায়দার বলেন, তিন বছর আগেও দ্বীপের সৈকতে শত শত কাছিম ডিম পাড়তে আসত। এখন কমে গেছে পরিবেশ না থাকার কারণে। কাছিমের ডিম বেওয়ারিশ কুকুর খেয়ে ফেলে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প র স কত স কত র পর ব শ ন কম র উপক ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রতন/মাসুদ