মৌলভীবাজারে ‘প্লাবনের ঢেউয়ের মতো ফোটা’ শালফুল
Published: 10th, April 2025 GMT
ইট বিছানো একটি পায়ে চলা সরু পথ বনের ভেতর দিকে চলে গেছে। ও পথে আশপাশের গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করেন। পথের দুই পাশে সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে শাল, গর্জনসহ নানা জাতের গাছ। গাছের নিচে, সড়কের পাশে শুকনা পাতার স্তূপ জমে আছে। শুকনা পাতায় মর্মর শব্দ তুলে দু–একটা বুনো প্রাণী, গিরগিটি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। ও রকম প্রকৃতি দেখেই কি উৎপল কুমার বসু লিখেছিলেন ‘পথ হতে সরে যাও। শোনা যায় পাতার মর্মর।’
দু–একটি কোকিলও তখন কোথাও শালগাছের পাতার আড়ালে, প্লাবনের ঢেউয়ের মতো ফোটা শালফুলের কাছে বসে শরীর লুকিয়ে ডেকে চলছে। চৈত্রের মৃদু দমকা হাওয়া টুকরা-টাকরা হয়ে ভেঙে পড়ছে কোকিলের ডাকে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের বনে, বুনো জঙ্গলে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল। তখন মাত্র দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে ঢলে পড়েছে সূর্য। বাতাসে রোদের গরম তেজ আছে, তবে বনের ছায়ায় গরমের সেই আঁচ খুব একটা ছিল না। মৃদু ও দমকা হাওয়া বইছে। পাতারা ঝিলমিল করে লাফিয়ে উঠছে, দুলছে। ঝলমলে রোদ নেমেছে গাছে গাছে, পাতায় পাতায়। লাফিয়ে লাফিয়ে সময় চলছে।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের দক্ষিণ দিকে কালেঙ্গার দিকে একটি সড়ক চলে গেছে। ওই সড়কের পাশেই পড়েছে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। ওটা সংরক্ষিত বন। বর্ষিজোড়া বিট অফিসের কাছে গিয়েই দেখা মিলেছে নতুন সময়ের, বসন্তকালের। বিট অফিসের কাছেই অনেকগুলো শালগাছে ফুল ফুটে আছে। ইকোপার্কের শালবন এখন ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে, নতুন চেহারা পেয়েছে। প্রতিটি শালগাছে ঢেউয়ের মতো লাফিয়ে ফুটেছে ফুল। গাছগুলোর চূড়ায় সোনালি-হলুদ আভার ঝুমকা ফুল বাতাসে দুলছে। এখন বনের ভেতরে সরু পথের দুই পাশে এমন ফুলের বন্যা চলছে।
মাটিতে ঝরে পড়ছে ফুলের পাপড়ি। শাখা-প্রশাখায় এসেছে নতুন পাতা। সেই হালকা, ঘন সবুজ পাতারা চকচক করছে রোদে ও ছায়ায়। কোথাও ঘন নিবিড় গাছের বন, কোথাও অন্য গাছের সঙ্গে মিলেমিশে দাঁড়িয়ে আছে শালগাছ। তবে ফুল দিয়েই সে তার আলাদা জাত এখন চিনিয়ে দিচ্ছে। বনের যেদিকেই তাকানো যায়, শালগাছের দেখা মিলছে, গাছে গাছে ফুলের দেখা মিলছে। বাতাসে শালফুলের মৃদু ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে।
এখন শালফুলের মাস চলছে, গাছগুলো শালফুলের উচ্ছ্বাসে ভাসছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত