ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ থামলেও প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী
Published: 11th, April 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া সব দেশের ওপর বিশাল শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। এখন চীন ১২৫ শতাংশ শুল্ক মোকাবিলা করছে। বিষয়টি এ পর্যন্ত হলেও বিশ্ববাজারে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাকি বিশ্ব এখনও সব মার্কিন রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, যদিও বেশির ভাগ মনোযোগ বস্তুগত পণ্যে শুল্ক আরোপের সরাসরি প্রভাবের ওপর, তথাপি ট্রাম্পের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী অর্থ ও অর্থনীতির প্রতিটি কোণে পৌঁছানোর হুমকি দিচ্ছে। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী নানা বাণিজ্যিক চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে, শেয়ারবাজার দুর্বল হয়েছে, পাশাপাশি দুর্নীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকারীরা এখনও এ নিয়ে তাদের রায় দেননি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতোমধ্যেই বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধ বেশির ভাগ দেশে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। চীন ২০২৫ সালের জন্য তার ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হতে পারে। অন্যদিকে, জার্মানিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেওয়া হতে পারে। বাণিজ্যের দিক থেকে যুক্তরাজ্য তুলনামূলক অক্ষত থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে যুক্তরাজ্যের। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কের প্রভাব কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এ বছর যুক্তরাজ্যের জিডিপিতে দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট কমবে। তবে, ঋণের সুদ এখনও বেশি এবং ভোক্তাদের আস্থা ঝুঁকির মধ্যে থাকায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের জন্য শুল্ক একটি উল্লেখযোগ্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গত তিন বছরের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করে, যা ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ১১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ট্রাম্পের শুল্ক গ্রাহকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধির হুমকি দিচ্ছে। এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য ওয়াশিংটনের শুল্ক আরোপের প্রতি সাড়া দিতে অনিচ্ছুক প্রমাণিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। শুল্ক বহাল থাকলে, তা বেড়ে আগামী বছর সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার শঙ্কা বাড়বে।
আশা করা হচ্ছে, বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের অর্থনীতি রক্ষায় শিগগিরই সুদের হার কমাতে পারে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী ধীর হলে, তারাও তা করতে বাধ্য হতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বড় প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বিভিন্ন দেশে অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো মুনাফায় বড় আঘাত আসতে পারে। শুল্কের কারণে ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করা বড় করপোরেট গ্রাহকরা বিপাকে পড়বেন। ঋণ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার ওপরও পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।
বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। ওয়াশিংটনের পিটারসন ইনস্টিটিউটের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ম্যারি লাভলি মার্কিন বন্দরগুলো ব্যাপকহারে প্রতারণা বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ, কাস্টমস কর্মকর্তারা লাখ লাখ আমদানি পণ্যের নতুন শুল্ক নিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। তবে সীমান্তে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের জন্য বিষয়টি আরও জটিল হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।
আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।