ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া সব দেশের ওপর বিশাল শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। এখন চীন ১২৫ শতাংশ শুল্ক মোকাবিলা করছে। বিষয়টি এ পর্যন্ত হলেও বিশ্ববাজারে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাকি বিশ্ব এখনও সব মার্কিন রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, যদিও বেশির ভাগ মনোযোগ বস্তুগত পণ্যে শুল্ক আরোপের সরাসরি প্রভাবের ওপর, তথাপি ট্রাম্পের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী অর্থ ও অর্থনীতির প্রতিটি কোণে পৌঁছানোর হুমকি দিচ্ছে। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী নানা বাণিজ্যিক চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে, শেয়ারবাজার দুর্বল হয়েছে, পাশাপাশি দুর্নীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকারীরা এখনও এ নিয়ে তাদের রায় দেননি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতোমধ্যেই বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধ বেশির ভাগ দেশে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। চীন ২০২৫ সালের জন্য তার ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হতে পারে। অন্যদিকে, জার্মানিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেওয়া হতে পারে। বাণিজ্যের দিক থেকে যুক্তরাজ্য তুলনামূলক অক্ষত থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে যুক্তরাজ্যের। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কের প্রভাব কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এ বছর যুক্তরাজ্যের জিডিপিতে দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট কমবে। তবে, ঋণের সুদ এখনও বেশি এবং ভোক্তাদের আস্থা ঝুঁকির মধ্যে থাকায়  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের জন্য শুল্ক একটি উল্লেখযোগ্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গত তিন বছরের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করে, যা ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ১১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ট্রাম্পের শুল্ক গ্রাহকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধির হুমকি দিচ্ছে। এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য ওয়াশিংটনের শুল্ক আরোপের প্রতি সাড়া দিতে অনিচ্ছুক প্রমাণিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। শুল্ক বহাল থাকলে, তা বেড়ে আগামী বছর সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার শঙ্কা বাড়বে। 

আশা করা হচ্ছে, বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের অর্থনীতি রক্ষায় শিগগিরই সুদের হার কমাতে পারে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী ধীর হলে, তারাও তা করতে বাধ্য হতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বড় প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বিভিন্ন দেশে অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো মুনাফায় বড় আঘাত আসতে পারে। শুল্কের কারণে ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করা বড় করপোরেট গ্রাহকরা বিপাকে পড়বেন। ঋণ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার ওপরও পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।  

বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। ওয়াশিংটনের পিটারসন ইনস্টিটিউটের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ম্যারি লাভলি মার্কিন বন্দরগুলো ব্যাপকহারে প্রতারণা বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ, কাস্টমস কর্মকর্তারা লাখ লাখ আমদানি পণ্যের নতুন শুল্ক নিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। তবে সীমান্তে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের জন্য বিষয়টি আরও জটিল হতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও