গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম
Published: 12th, April 2025 GMT
গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ববোধের উপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, যেসব ছাত্ররা সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সকল রাজনৈতিক দলের নৈতিক দায়িত্ব।
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্কে আয়োজিত মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রকল্পের দু’দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হুসাইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সারজিস আলম বলেন, “ওটি সম্পূর্ণরূপে তার ব্যক্তিগত মতামত। রাজনৈতিকভাবে তারা আমাদের সিনিয়র, তাদের কাছ থেকে আমরা শিখি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অবমাননাকর বক্তব্য রাজনীতির সৌহার্দ্য নষ্ট করে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে অতীতে যেভাবে কথা বলা হয়েছে, তেমন ভাষা বা মনোভাব আমরা আর দেখতে চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলন দেশের শিক্ষার পরিবেশে কিছুটা বিঘ্ন ঘটালেও এটি কোনোভাবেই ধ্বংস নয়। এটি ছিল একটি বিশাল ত্যাগ। এই ত্যাগ শুধু তাদের নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের।”
ভারতের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারত পারস্পরিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ানো এই দুই দেশের জন্য শুভ হবে না। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। তবে বাংলাদেশ কোনও অন্যায় বা অযৌক্তিক বঞ্চনার মুখে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে সক্ষম।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন উন্মুক্ত। বাংলাদেশ চাইলে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জন করতে পারে। আমরা আশা করি ভারত একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি রাষ্ট্র হিসেবে আচরণ করবে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বাংলাদেশকে সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করবে।”
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।