গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ববোধের উপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, যেসব ছাত্ররা সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সকল রাজনৈতিক দলের নৈতিক দায়িত্ব।

শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্কে আয়োজিত মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রকল্পের দু’দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

এসময় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হুসাইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সারজিস আলম বলেন, “ওটি সম্পূর্ণরূপে তার ব্যক্তিগত মতামত। রাজনৈতিকভাবে তারা আমাদের সিনিয়র, তাদের কাছ থেকে আমরা শিখি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অবমাননাকর বক্তব্য রাজনীতির সৌহার্দ্য নষ্ট করে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে অতীতে যেভাবে কথা বলা হয়েছে, তেমন ভাষা বা মনোভাব আমরা আর দেখতে চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলন দেশের শিক্ষার পরিবেশে কিছুটা বিঘ্ন ঘটালেও এটি কোনোভাবেই ধ্বংস নয়। এটি ছিল একটি বিশাল ত্যাগ। এই ত্যাগ শুধু তাদের নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের।”

ভারতের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারত পারস্পরিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ানো এই দুই দেশের জন্য শুভ হবে না। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। তবে বাংলাদেশ কোনও অন্যায় বা অযৌক্তিক বঞ্চনার মুখে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে সক্ষম।”

তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন উন্মুক্ত। বাংলাদেশ চাইলে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জন করতে পারে। আমরা আশা করি ভারত একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি রাষ্ট্র হিসেবে আচরণ করবে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বাংলাদেশকে সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করবে।”

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ