মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা
Published: 12th, April 2025 GMT
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, অনেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছেন। এই প্রীতি আসছে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার মনে করার মাধ্যমে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্মেলনকক্ষে এক সেমিনারে সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন। ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসির (আইপিএলডি) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা’ শিরোনামের এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে ফ্যাসিজম কোথায় কোথায় হয়েছে। আগের রেজিম মনে করেছে তাদের শাসন বৈধ, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই যে মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করা, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার করার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা; এটিই ফ্যাসিজমের উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধ যদি আইনের শাসন প্রবর্তনে আপনাকে সাহায্যই না করে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করাই আপনার ঠিক হয়নি।’
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, আজ বাংলাদেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছে, কিন্তু সেটা শুধু কথার ফুলঝুরি। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। অথচ এই আদর্শকেই ১৯৭২ সালে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা টেকসই তা বুঝতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকাতে হবে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যা করেছি, তা ঔপনিবেশিক ফ্যাসিজমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন বাংলাদেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ঢাকা শহরের ৫ শতাংশ লোককে স্পর্শ করে না সে রকম একটা মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। সেটাও ভালো। কিন্তু বাকি ৯৫ শতাংশ লোক কী অপরাধ করল? সাধারণ গণপরিবহন নেই কেন আমাদের? আপনি ইচ্ছে করলে বাসে উঠতে পারছেন না কেন? এটা কোনো সভ্য দেশের মাপকাঠি হতে পারে? এটি গণতন্ত্রের মাপকাঠি হতে পারে? যেখানে আপনার ঢাকা শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে ছয় ঘণ্টা লাগে।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে আমাদের কিছু সংস্কার করতে হবে। আমাদের অর্ডারটা জবরদস্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এটি গণতান্ত্রিক নয়। কেন র্যাব গঠিত হলো, বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হলো, কেন জরুরি অবস্থা জারি করা হলো—সবই হলো কাঠামোবদ্ধ ভায়োলেন্স। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোটের অধিকার নয়।’
আইপিএলডির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিএলডির ট্রাস্টি মেম্বার তাহমিন বানু এবং নির্বাহী সদস্য এহসান শামীম। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইপিএলডির নির্বাহী সদস্য ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র আম দ র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।