Prothomalo:
2025-12-13@14:22:26 GMT

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মোহরানা

Published: 14th, April 2025 GMT

সাহাবি আবু তালহা (রা.) ইসলাম গ্রহণ পূর্বে উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.)-এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠন। উম্মে সুলাইম (রা.) নাকচ করে দেন। আবু তালহা তখন তাকে অনেক বেশি মোহর দেওয়ার প্রস্তাব করেন। উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, ‘আমি একজন মুশরিককে বিবাহ করতে পারি না। আবু তালহা, তুমি যার ইবাদত করো তার প্রতিকৃতি তো বানায় অমুক গোত্রের এক দাস। যদি তুমি তাকে আগুন দাও তবে তা সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে যাবে।’

আবু তালহা (রা.

) তাতে বেশ কষ্ট পেলেন। তিনি তাকে আরও বেশি পরিমাণ মোহর দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করলেন। আশা ছিল হয়তো এবার উম্মে সুলাইমের অন্তর বিগলিত হবে এবং তিনি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হবেন। কিন্তু উম্মে সুলাইম (রা.) অত্যন্ত বিনম্র চিত্তে বললেন, ‘আবু তালহা, তোমার মতো পুরুষকে কোনো নারী প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কিন্তু তুমি অমুসলমান, আর আমি মুসলমান। আমার জন্য তোমার সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়।’

আবু তালহা (রা.) বললেন, ‘আমি তোমাকে সোনা-রুপা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখব।’

উম্মে সুলাইম (রা.) তাতে রাজি হলেন না। কারণ, তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইসলাম। তিনি বললেন, ‘আমার সোনা-গয়নার প্রয়োজন নেই। আমি চাই তুমি ইসলাম কবুল করো।’

আরও পড়ুনখ্রিষ্টানদের সঙ্গে মহানবীর (সা.) শান্তিচুক্তি০৬ এপ্রিল ২০২৫

আবু তালহা (রা.) বললেন, ‘এই ব্যাপারে আমি কার সঙ্গে কথা বলব?’

উম্মে সুলাইম (রা.) বললেন, ‘রাসুলের (সা.) সঙ্গে কথা বলো।’

আবু তালহা (রা.) তখন ‘রাসুলের (সা.) খেদমতে হাজির হলেন। আবু তালহা (রা.)-কে দেখে নবীজি উপস্থিত সাহাবিদের বললেন, ‘তোমাদের কাছে আবু তালহা আসছে এবং তার চোখে ইসলামের আলো রয়েছে।’

আবু তালহা (রা.) নবীজিকে সেই কথা বললেন যা উম্মে সুলাইমের কাছে বলেছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে ইসলামের গ্রহণের পরামর্শ দেন। আবু তালহা গ্রহণ করেন। ইসলামে গ্রহণের ভিত্তিতে উম্মে সুলাইমের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। আবু তালহার ইসলাম গ্রহণকে উম্মে সুলাইম (রা.) মোহরানা হিসেবে মেনে নেন। পৃথিবীর সবচে’ মূল্যবাদ সম্পদ তার মোহরানা হিসেবে ধার্য করে নেন। (মুসনাদে আবি দাউদ আত-তায়ালিসি, হাদিস: ২,১৬৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ৭,৩১০; বায়হাকি, ৪/১০৯)

এই মহিয়সী নারী সেই সব নারীদের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত যারা শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রত্যাশা করে। একটু ভেবে দেখুন, তাদের চরিত্র কীভাবে ইমান, ইয়াকিন, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের গুণে উদ্ভাসিত ছিল। তারা মহান প্রতিপালকের কাছে কী পরিমাণ মর্যাদা, সম্মান, সাওয়াব ও প্রতিদানের উপযুক্ত ছিলেন। তারা নিজেদের পেছনে কত প্রশংসনীয় স্মৃতি রেখে গেছেন। কত মহান ও শ্রেষ্ঠ সওয়াব ও প্রতিদান তারা অর্জন করেছেন। কারণ তারা আপন প্রতিপালকের সঙ্গে, নিজের সত্তার সঙ্গে এবং মানুষের সঙ্গেই নিষ্ঠাবান ও সৎ ছিলেন। যেদিন সত্যবাদিদের সততা তাদের উপকার পৌঁছাবে সেদিন তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। যেখানে তারা চিরদিনের জন্য অবস্থান করবে। তারা তাদের মহান সফলতা নিজ চোখে দেখতে পাবে।

লেখকের আসআদু ইমরাআতিন ফিল আলাম গ্রন্থ থেকে অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনরাসুল (সা.) তাঁকে চাদর উপহার দিলেন০৬ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত র জন য বলল ন ইসল ম গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’

৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।

লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’

লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’

আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ