জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা এলাকায় ট্রাক-মিনিবাস ও ট্যাংক-লড়ি পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনায় মালিক-শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এই কারখানার সার পরিবহনে বিঘ্ন ঘটায় দেশের উত্তর অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় কৃত্তিম সার সংকট সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

স্থানীরা জানান, প্রায় দুই মাস আগে সরিষাবাড়ি উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়কের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এই ঘটনায় আকরাম হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সাময়িক বহিষ্কারের পর আকরাম হোসেন কোনো জবাব না দিয়ে বিষয়টি সরিষাবাড়ি উপজেলা শ্রমিকদলের নেতাদের জানালে উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আদমের নেতৃত্বে মিলন, লিটন, জাহাঙ্গীর, মিঠু, উজ্জ্বলসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গত শুক্রবার তারাকান্দি ট্রাক-মিনিবাস ও ট্যাংক-লড়ি মালিক সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে গিয়ে ট্রাক চালক শফিক ও জুলহাসসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করে। এঘটনায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

তারা আরও জানান, ইরি-বোরো মৌসুমের পিক সিজনে ট্রাক-মিনিবাস ও ট্যাংক-লড়ি পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সার পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটেছে। এতে করে যমুনা সার কারখানার কমান্ড এরিয়ার ১৬ জেলায় কৃত্তিম সার সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পোগলদিঘা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নে কিছু অসাধু ব্যক্তি কৌশলে ঢুকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছিল, এরই প্রতিবাদ করায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে তালা দেওয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরিবহন মালিক সমিতি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ চুরি হয়ে যাচ্ছে বিধায় শ্রমিকদলের নেতারা সেখানে তালা দিয়েছে।

তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আব্দুল মোতালেব জানান, তিনি ছুটিতে থাকার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানে কি অবস্থায় রয়েছে সেটি জানা নেই, কর্মস্থলে গিয়ে বলতে পারবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আকর ম হ স ন উপজ ল ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ