নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই
Published: 14th, April 2025 GMT
নোবেলজয়ী কালজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাজধানী লিমায় ৮৯ বছর বয়সে মারা যান পেরুর এই লেখক। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের প্রজন্মের অবসান হলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে য়োসার বড় ছেলে আলভারো বার্গাস য়োসা লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বাবা মারিও বার্গাস য়োসা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারের সদস্যরা এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন।’ এক্সে পোস্ট করা এ ঘোষণায় সই করেছেন আলভারোর দুই সহোদর গোনসালো ও মরগানা বার্গাস য়োসা।
১৯৩৬ সালে দক্ষিণ পেরুর অ্যারিকুইপায় মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মারিও বার্গাস য়োসার জন্ম। ২০১০ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত য়োসা লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন। স্প্যানিশ ভাষার এই ঔপন্যাসিক স্পেনেরও নাগরিক।
১৯৬০ ও ’৭০–এর দশকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের বিস্ময়কর উত্থানের সময়কার কালজয়ী লেখকদের একজন য়োসা। ওই সময়ের কালজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বিয়ার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও আর্জেন্টিনার হুলিও কোর্তাসার।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে য়োসার স্বাস্থ্যের অবনতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত অক্টোবরে তাঁর ছেলে আলভারো বলেন, তাঁর বয়স ৯০ বছর ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে এসে সবারই কাজের মাত্রা কিছুটা কমাতে হবে।
নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে সোমবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে পেরু। এ সময় সরকারি ভবন ও স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
য়োসার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’, ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’, ‘দ্য গ্রিন হাউস’, ‘ডেথ ইন দ্য আন্দিজ’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট’। প্রায় ৩০টি ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে।
লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের লেখক মারিও বার্গাস য়োসা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ত ন আম র ক র ন ব লজয় অব দ য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ