ফ্যাসিবাদ ভুলে বেরোবি শিক্ষার্থীদের মুখে বাঙালির নবজাগরণ
Published: 14th, April 2025 GMT
উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—চারপাশ জুড়ে বাজছে নতুন গানের সুর। আজ বাংলাভাষীদের স্বপ্ন দেখার দিন। পুরনো যত জরা, হতাশা আর গ্লানি—সব ভুলে সামনে তাকাবার সময় এখন। এ দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের নতুন পৃষ্ঠা নয়, এটি প্রকৃতির এক অনবদ্য রূপ, এক নব বার্তা। এটি শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এ সময়টাতেই বাঙালির মধ্যে এক অন্যরকম আবেশ কাজ করে।
পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখার অনন্য সুযোগ তৈরি হয় এই দিনটিতে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাসের রঙ। হালখাতা, মিষ্টি বিনিময়—এসব শুধু রীতি নয়, এক নিঃশব্দ অঙ্গীকার। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার প্রতীক। ব্যবসা, সম্পর্ক, জীবন—সবই যেন নতুন করে শুরু হয়।
তবে অতীত ছিল উজ্জ্বল নয়। গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় মানুষ ছিল দমবন্ধ পরিবেশে। প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত, উৎসবের আনন্দ ছিল নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সময় বদলেছে। এবারের বর্ষবরণ সেই পরিবর্তনের বার্তা নিয়েই এসেছে। ফ্যাসিবাদ পরবতী নববর্ষ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।
বর্ষবরণ হোক নতুন এক নবজাগরণ
এবারের বর্ষবরণ যেন এক নবজাগরণ। এতদিন যেভাবে অন্ধকারে ঢাকা ছিল আমাদের স্বদেশ, তা আজ এক নতুন রূপে উদ্ভাসিত। ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসন শুধু কণ্ঠরোধ করেনি, আমাদের স্বপ্নগুলোকেও মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই দেশের তারুণ্য থেমে থাকে না। আজকের পহেলা বৈশাখ নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এক উজ্জ্বল আগামীর দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
(লেখক: জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ)
আর নিপীড়নের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই না
বাংলা নববর্ষ আমাদের আত্মপরিচয়ের উৎসব। এই দিনে আমরা ফিরে যাই আমাদের শিকড়ে, গাই ঐক্যের গান। বৈচিত্র্যের মাঝে একতার গল্প বলি, সংস্কৃতির ছায়ায় গড়ে তুলি সহনশীল, আনন্দময় এক বাংলাদেশ। চলো, ১৪৩২ সালকে বানাই ভালোবাসার, সহমর্মিতার আর সংস্কৃতির মিলনমেলা।
আমরা আর নিপীড়নের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই না। আমরা চাই এক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে মত প্রকাশের অধিকার, থাকবে স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা, থাকবে মৌলিক অধিকার আর সমতা। যেখানে রাষ্ট্র হবে জনগণের জন্য, নিপীড়নের জন্য নয়।
(লেখক: ফাত্তাহান আলী, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ)
শোভাযাত্রা হোক সবার
পহেলা বৈশাখ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি আর আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে। আজ আমরা চাই, এই শোভাযাত্রা হোক সবার, হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজেকে দেখতে পায় আনন্দ আর একতার আয়নায়।
(লেখক: জাহিদ হাসান, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, লোকপ্রশাসন বিভাগ)
ফ্যাসিবাদ আর না আসুক এ মাটিতে
নতুন সময়ে বাঙালীর সবার অধিকার নিশ্চিত হোক। আমরা চাই এক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে মত প্রকাশের অধিকার, থাকবে স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা, থাকবে মৌলিক অধিকার আর সমতা। বাঙালি নববর্ষে এটাই হোক সবার চাওয়া- ফ্যাসিবাদ আর না আসুক এ মাটিতে।
(লেখক: আজিজুর রহমান, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বিভাগ)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত য় বর ষ ক নত ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই।
মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার।
যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।
সুচরিতা/শাহেদ