বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) ঢাকার সোবহানবাগ ক্যাম্পাসে সোমবার সকালে বাংলাদেশে নিবন্ধিত বেশিরভাগ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই) পণ্যের সমাবেশ ঘটিয়ে ‘জিআই পণ্য প্রদর্শনী ও এর বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ’ বিষয়ে একটি মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেধাস্বত্ব বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, বিআইএমে এ সংক্রান্ত কার্যক্রমকে পুনর্জ্জীবিত করতে প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে, জিআই পণ্যের বাণিজ্যিকায়নের সম্ভাবনা, জনপ্রিয়তা ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে প্রাধান্য দিয়ে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক দিবস পহেলা বৈশাখে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

ওবায়দুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইএম-এর মহাপরিচালক রশিদুল হাসান। মুক্ত আলোচনা সঞ্চালন করেন বিআইএম-এর গবেষণা বিভাগের প্রধান সাঈদুর রহমান। আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। এতে বলা হয়,   
দেশে জিআই পণ্য সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো এবং আরও বেশি সংখ্যক জিআই পণ্য নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করা; বিআইএমের স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ইন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন ও বর্তমান অংশগ্রহণকারীদের জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলা;  স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে জিআই পণ্যের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের সম্ভাবনার ওপর গবেষণা কার্যক্রমের গবেষণা পরিধি চিহ্নিত ও অন্বেষণ করা এবং মেধাস্বত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ পুনরায় চালু করার ঘোষণা এবং সে ব্যাপারে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করা দরকার। 

ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের পেটেন্ট ডিজাইনের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন জিআই নিবন্ধনের বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরেন। এরপর শিল্প সচিব সরাসরি বিভিন্ন আলোচক ও অংশগ্রহণকারীদর সঙ্গে আলোচনা করেন। শেষে বিআইএমের মহাপরিচালকের বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা শেষ হয়। আলোচনার আগে অংশগ্রহণকারীরা জিআই পণ্য দ্বারা প্রস্তুত নাস্তা করেন এবং প্রধান অতিথি জিআই পণ্য প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।  

আলোচনা থেকে জানা যায়,  আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে মেধাস্বত্বের বিষয়ে সাধারণের আগ্রহ বড়েছে। এ সংক্রান্ত  প্রশিক্ষণের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সাধারণের আগ্রহের ক্ষেত্রে অন্যান্য মেধাস্বত্বের তুলনায় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য শীর্ষ স্থানীয় যা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাতন্ত্র হতে উদ্ভূত। মৌলিকত্ব বিবেচনায় জিআই পণ্যগুলো ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, বা মানব উৎপাদনশীলতার বিশেষত্বকে প্রতিফলন করে এবং উচ্চতর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবদান রাখতে পারে। বিশ্বাসযোগ্যতা বিবেচনায় জিআইপণ্যগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া একটি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো অনুসরণ করে থাকে এবং অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর জন্য এ সকল পণ্যের উৎপাদকদের একটি যৌথ ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রয়োজন হয়ে থাকে।  

নিবন্ধিত জিআই পণ্যের সংখ্যা প্রায়শই জাতীয় গর্বের স্ংস্কৃতিক উপাদান হিসাবে প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিবন্ধনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং এ বিষয়ে মিডিয়া কাভারেজ নির্দিষ্ট ধরনের মেধাস্বত্ব হিসেবে জিআই পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি করেছ। জামদানি শাড়ি ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন লাভ করে। পরে পর্যায়ক্রমে ইলিশ মাছ, রংপুরের শতরঞ্জি, বাংলাদেশ কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জিসহ ৫৬টি পণ্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে জিআই নিবন্ধন পেয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি পণ্য পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে নিবন্ধনের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ সকল পণ্যের অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম। জিআই পণ্যের সম্প্রসারিত বহুবিধ ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য জিআই সম্পর্কিত ওয়েব কনটেন্ট প্রস্তুত, জিআই গিফট বক্স, জিআই ম্যেনু প্রণয়ন এবং জিআই ট্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব আইএম ন বন ধ অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা

চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।

জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।

জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
  • বুয়েটের নতুন রিকশার অনুমোদন দেবে সরকার, ‘মাস্টার ট্রেইনার’ হবেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা