দিনাজপুরে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারওয়ার কবির। আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে পৌর শহরের ঈদগাহ বস্তি এলাকায় দীবা গার্ডেন নামের একটি বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন।

গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারওয়ার কবির.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছর বয়সী ইংরেজির শিক্ষক, ফলোয়ার ৫৫ লাখ 

স্কুলের ছুটিতে মা-বাবা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেড়াতে গেছে মাইসুন। ২০২৩ সালের কথা। দুবাই শহরের একটি শপিং মল থেকে কেনাকাটা শেষে পার্কিংয়ে এসেছে তারা গাড়িতে উঠবে বলে। সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক ছুটে এলেন মাইসুনকে দেখে। প্রবাসী ওই শ্রমিকের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। তাঁর সন্তানেরা এবং তিনি নিজেও মাইসুনের ভিডিও দেখেন। তাই বিদেশের মাটিতে মাইসুনকে সামনে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। সেলফি তুলেও শেষ হয়নি আবদার। বায়না ধরলেন, মাইসুন আর তার পরিবারকে আপ্যায়ন করাবেন।

সবিনয়ে নিষেধ করার পর পকেট থেকে বের করে ১০ দিরহাম তুলে দিলেন মাইসুনের হাতে। না নিলে ভীষণ কষ্ট পাবেন বলে জানালেন। অগত্যা নিতেই হলো। প্রবাসী শ্রমিকের সেই ১০ দিরহামের নোটটি ভালোবাসার স্মারক হিসেবে এখনো নিজের কাছে রেখে দিয়েছে মাইসুন। 

চট্টগ্রামের মেয়ে উম্মে মাইসুন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চবিদ্যালয়ের বাংলা মাধ্যমের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সৈয়দ বাড়িতে। ১৫ বছর বয়সী এই খুদে ইনফ্লুয়েন্সারের বিশ্বজোড়া ভক্ত-অনুসারী। সবাই তাকে চেনে ‘মাইসুনস ওয়ার্ল্ড’ নামে। তা দেশে হোক কিংবা বিদেশে, অল্প সময়ের মধ্যেই কেউ না কেউ এসে হাজির হয় সেলফি তোলার জন্য। মাইসুনও কাউকে নিরাশ করে না। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মধ্যেই মাইসুনের অনুসারী রয়েছে। কেবল ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য নয়, ইদানীং ছোট ভাই জুবরানের কিউট কিউট সব দুষ্টুমি ভরা সংলাপের কারণেও মাইসুনের ভিডিওর দর্শক বাড়ছে। ছোট জুবরানের নিজের আলাদা ফেসবুক পেজ আছে। জুবরানস ওয়ার্ল্ড নামের ওই পেজে ফলোয়ার ৩ লাখ ৬ হাজার। 

যোগাযোগের বৈশ্বিক ভাষা ইংরেজির প্রতি এ দেশের শিশুদের মনে একটা ভীতি ছোটবেলা থেকেই জেঁকে বসে। ভাষার এই বাধা অনেকের জীবনেই স্থায়ী হয়। মাইসুন শিশুদের মন থেকে এই ভীতি একেবারেই দূর করে দিয়েছে। মাইসুনের কথা শুনলে, ভিডিও দেখলে ও বই পড়লে মনে হবে ইংরেজি আসলেই ‘ডাল–ভাত’। 

১৫ বছর বয়সী এই খুদে ইনফ্লুয়েন্সারের বিশ্বজোড়া ভক্ত-অনুসারী। সবাই তাকে চেনে ‘মাইসুনস ওয়ার্ল্ড’ নামে। তা দেশে হোক কিংবা বিদেশে, অল্প সময়ের মধ্যেই কেউ না কেউ এসে হাজির হয় সেলফি তোলার জন্য। মাইসুনও কাউকে নিরাশ করে না।যেভাবে শুরু

মাত্র ৯ বছর বয়সে ইউটিউবে ইংরেজি শেখানো শুরু করে মাইসুন। প্রথম ভিডিওর নাম ছিল ‘ঘরে খেলতে খেলতে ইংরেজিতে কথা বলতে শেখা’। ভিডিওটি ইন্টারনেটে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনুসারীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ইংরেজি বলতে যাদের ভয় বা লজ্জা, তারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল মাইসুনের ভিডিও দেখতে। 

কখন কোন শব্দের আগে কোন প্রিপোজিশন বসবে, কখন ‘অন’, ‘অ্যাট’ বসবে বা রেস্তোরাঁয় গেলে কীভাবে খাবারের মেনু দেখে অর্ডার করতে হবে, এসব টুকিটাকি ইংরেজি সবাই যেন গোগ্রাসে গিলতে লাগল। কোন শব্দের ব্যবহারে কথ্য ইংরেজিটা আরও বোধগম্য হবে, সেই টিপসও মিলছে মাইসুনের কাছ থেকেই। 

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে দুই দশক ধরে বাস করছেন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকার বাসিন্দা কবির চৌধুরী। সম্প্রতি দেশে এসে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। হঠাৎ বললেন, ‘জানেন, আপনাদের শহরে একটি মেয়ে আছে, মাইসুন। বাংলা মাধ্যমে পড়ে। কথা বলে অবিকল ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে। তাহলে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন যে কোনো বড় বিষয় নয়, তা তো প্রমাণিত। তবু এত শিক্ষার্থী কেন ইংরেজিতে খারাপ করে, সেটাই প্রশ্ন।’

কখন কোন শব্দের আগে কোন প্রিপোজিশন বসবে, কখন ‘অন’, ‘অ্যাট’ বসবে বা রেস্তোরাঁয় গেলে কীভাবে খাবারের মেনু দেখে অর্ডার করতে হবে, এসব টুকিটাকি ইংরেজি সবাই যেন গোগ্রাসে গিলতে লাগল। কোন শব্দের ব্যবহারে কথ্য ইংরেজিটা আরও বোধগম্য হবে, সেই টিপসও মিলছে মাইসুনের কাছ থেকেই। ইনফ্লুয়েন্সার মাইসুন

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৯ বছর বয়সে ডিজিটাল মাধ্যমে যাত্রা শুরু মাইসুনের। এখন ফেসবুকে তার ফলোয়ার সংখ্যা ৪০ লাখের মতো, আর ইউটিউবে ১১ লাখ, ইনস্টাগ্রামে ২ লাখ ৬৫ হাজার, টিকটকে ১ লাখ ৯৪ হাজার। সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫৫ লাখ ফলোয়ার। শুরুতে রবি টেন মিনিটস স্কুলের সঙ্গে কাজ করেছিল মাইসুন। তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে কনিষ্ঠ অনলাইন শিক্ষকের খেতাবও পেয়েছে সে। 

ভিডিও তৈরিতে মা-বাবা দুজনের সমান সহায়তা পায় মাইসুন। তবে ভিডিওর কনটেন্ট নিয়ে ভাবনাটা মাইসুনের নিজের। মাইসুনের কনটেন্ট সব বয়সীদের কাছেই জনপ্রিয়। তার ‘ইংরেজিতে কথা বলার শুরুর ৩৮টি বাক্য’ শিরোনামের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৪ কোটি ১০ লাখ বার দেখা হয়েছে এই পর্যন্ত। ২ লাখ ৩৩ হাজার বার শেয়ার হয়েছে ভিডিওটির। মাসে গড়ে ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায় ৩ কোটিবার দেখা হয় তার ভিডিও। গত পাঁচ বছরে ৭১৭টি কনটেন্ট আপলোড হয়েছে মাইসুনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে। 

নানা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছে মাইসুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ