‘ক্লাস নাইনে থাকতে বাবা বিয়া দিল, এখন আমি মা’
Published: 16th, April 2025 GMT
‘ক্লাস নাইনে থাকতে বাবা বিয়া দিল, এখন আমি মা! ইচ্ছা ছিল চাকরি করব। এখন এসব ইচ্ছে জাগে না। ছেলেকে হাফেজ বানাব, এটাই স্বপ্ন। গ্রামে বাল্যবিয়ে নিয়ে মানুষকে বোঝাব, এটাই এখন আমার ইচ্ছা।’ ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে সদ্য মা হওয়া শাহিনা বেগম কথাগুলো বলছিলেন।
২০২৩ সালের মার্চে বাল্যবিয়ের শিকার হন শাহিনা। বাবা পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় গার্মেন্টস কর্মী শাহিন আলমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। বর্তমানে ২০ বছর বয়সী শাহিন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ১৪ এপ্রিল প্রসব ব্যথা শুরু হয় শাহিনার। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেবভাট গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসতে দেড় ঘণ্টা সময় চলে যায়। এত রাতে কোনো যানবাহন না পেয়ে পাশের গ্রামের এক ইজিবাইক ম্যানেজ করে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এসে পৌঁছান। তখন ঘড়ির কাঁটায় ভোর ৫টা বেজে ২০ মিনিট। সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ছেলেসন্তান জন্ম দেন শাহিনা বেগম। এটি তাঁর প্রথম সন্তান।
আনন্দের খবরে মোবাইলে সন্তানকে আজান শোনান শাহিনার দাদা রিপন ইসলাম। এরপর শিশুর নামকরণ করেন নানি মনোয়ারা বেগম। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্রামত ধাত্রী বাচ্চার হওয়ার সময় দিছিল ১৫ দিন, বলছিল ডাক্তার দেখাবার, বাড়িত পুরুষ মানুষ নাই, হামরা বাড়িত যত্নে রাখছিলাম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন আগে বছরের পহেলা দিনে হামার নাতি হইল হলো। হামরা ভীষণ খুশি। পহেলা বৈশাখে যে বাচ্চাটা হবে আমরা তো ভাবি নাই, ভাবছি বাড়িতে হবে দিন অনুযায়ী।’
নবজাতকের বাবা শাহিন আলম বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাচ্চাটা হওয়াতে হাসপাতালের সবাই খুশি। তারা নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের শুভেচ্ছা জানাইছে। বাড়ি শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় আমরা মাঝেমধ্যে ফোনে খোঁজখবর জানাতাম। আমার স্ত্রী গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য আপাদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিতেন। বর্তমানে বাচ্চা ও আমার স্ত্রী সুস্থ থাকায় আমি বেশ খুশি।’
শিশুটির দাদি ময়েজান বেগম বলেন, ‘গ্রামের নানান মানুষের নানা কথা, বেটার বউয়ের কম বয়স, বাচ্চা সমস্যা হবে। চুল ছাড়ি না দেবে, রাইতত না বেড়াবে– নানা কথা। আমরা তাও সবার কথা শুনি বউয়ের যত্ন নিছি। তামার এলাকাত সাধ ভক্ষণের চল (রীতি) নাই। তাই আলাদা করি এটা করি নাই। ভালো-মন্দ প্রতিদিন খাওয়াইছি, নিয়ম-কানুন বলি দিছি সেভাবে মানছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চা হওয়ার পর আমি প্রথম কোলে নিছি। নার্সরা নববষের্র শুভেচ্ছা দিয়ে আমার কোলে দিছে নাতিক। তারপর বাজার থাকি সাদা-কালো রঙের প্রথম জামা কিনে আনি পরাইছি। বউমার ইচ্ছা নাতিক হাফেজ বানাবে। মানুষক আল্লাহর পথে আনবে আর হামার গ্রামের নানা প্রথা-কুসংস্কার নিয়ে মানুষকে বোঝাবে।’
মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান কত দূরে আমি সঠিক জানি না। সকালে কোনো অনুষ্ঠান বা গানের আওয়াজ পাইনি। ওভাবে খেয়াল করা হয়নি। ক্লিনিক থেকেও কিছু বলেনি। তবে পহেলা বৈশাখে বাচ্চাটা হওয়ায় আমি খুব খুশি। আমার ভীষণ ভয় ছিল, কিন্তু এখন সে ভয় কেটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করব। সেটা হয়নি, আমি আমার ছেলেকে পড়ালেখা করে হাফেজ বানাতে চাই। আমি দেখছি সবাই হাফেজদের কথা শোনে। গ্রামের নানা প্রথা, কুসংস্কার দূর করা দরকার, তাই হাফেজ বানাব।’
শিশু-কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডা.
সমকাল সুহৃদ সমাবেশের সদস্য খাদিজা আক্তার পাখি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের দিন আমরা কয়েকজন সদস্য জেলা প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দ র্যালিতে না গিয়ে টিম ভাগ হয়ে সকালে জেলা শহরের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশুর খোঁজ নিতে গিয়ে শিশু না পেয়ে যখন হতাশ হলাম, তখনই আমরা এই ক্লিনিকের একজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছালাম। আমরা উপজেলা শহরেও খোঁজ নিয়ে বাচ্চার খোঁজ পাইনি। জেলার প্রথম বাচ্চার খবর পেয়ে আমরা সত্যি আনন্দিত। আমরা তাদের পাশে থাকতে পেরেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা