দুধের সাধ ঘোলে না মিটলেও এই গরমে একটু প্রশান্তির জন্য ঘোলের চাহিদা এখনো রয়েছে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে ঘোল বিক্রি করে আব্দুস সালামের সংসার চলে। বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ধোয়াইল গ্রামে। ‘ঘোল সালাম’ নামেই তিনি পরিচিত। গরমকালের পুরো সময় তিনি ঘোল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
নানা খাবারের ভিড়ে ঘোল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তার পরও গ্রামগঞ্জে প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ঘোলের চাহিদা রয়েছে। দুধ দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পানীয় তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা সালাম বংশানুক্রমে আজও ধরে রেখেছেন। তার বাপ-দাদারা এই ব্যবসা করতেন। পরিবারের সবাই ছেড়ে দিলেও তিনি শেষ প্রতিনিধি হিসেবে ধরে রেখেছেন। তার পর আর কেউ এ ব্যবসা করবেন না বলে জানান সালাম।
তিনি বলেন, “সবাই ঘোল তৈরি করতে পারেন না। প্রয়োজন হয় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। গাভীর দুধ জাল দিয়ে ঘন করে তারপর ঠান্ডা করতে হয়। তার ভেতর টকদই দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে নাড়তে হয়। এক সময় দুধ থেকে মাখন আলাদা হয়ে যায়। মাখন দিয়ে তৈরি করা হয় খাঁটি ঘি। দুধ মিশ্রিত ঘন পানি ঘোলে পরিণত হয়। ঘোলকে এলাকা ভেদে মাঠা নামে চেনেন অনেকে।”
সালাম জানান, সব ধরনের পানিতে ঘোল হয় না। আয়রনমুক্ত পানি দরকার হয়। এ জন্য দূর থেকে নদীর স্বচ্ছ পানি সংগ্রহ করতে হয়। পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করা হয়। ঘোল তৈরির পর মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয়।
আব্দুস সালামের ঘোল এলাকায় নাম করা। তার ঘোলের কদর সর্বত্র। ঘোল ভর্তি হাঁড়ি নিয়ে বাজারে পৌঁছানোর অপেক্ষামাত্র। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায় তার সমস্ত ঘোল। অনেকে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখেন। প্রতি গ্লাস ঘোল বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ টাকায়।
অনেক সময় পাড়ায় পাড়ায় হাঁক ছেড়ে ঘোল বিক্রি করেন তিনি। খরচ বাদে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এতেই চলে যায় স্ত্রী আমেনা বেগমকে নিয়ে নিঃসন্তান সালাম মিয়ার সংসার।
আব্দুস সালাম জানান, তার পূর্ব পুরুষ দই, মিষ্টি ও ঘোল তৈরির কাজ করতেন। তার বাবা আজগর আালীর কাছ থেকেই তিনি ঘোল তৈরির কাজ শিখেছেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। চাচা ও চাচাত ভাইয়েরা এই পেশায় আসেননি। গরমের তিন মাস চলে এই কাজ। বাকি সময় অন্য কাজ করেন তিনি।
ঘোল শরীর ঠান্ডা রাখে। রোগমুক্তির পর ঘোল পান উপকারী। এছাড়া গরম লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা অসুখে ঘোল উপকারি বলেও জানান সালাম।
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫