দেশের ২২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো ‘ব্যবসা বিষয়ক উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) পাবিপ্রবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের উদ্যোগে ‘ব্যবসায়িক উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন’ প্রতিপাদ্যে দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্যোক্তা বিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর ধারণা ছড়িয়ে দিতে এবং টেকসই ব্যবসায়িক মডেলের সম্ভাবনা অন্বেষণে এ আয়োজন বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে বলে জানান আয়োজকরা।

সম্মেলনে জমা পড়া ৪০টি গবেষণাপত্রের মধ্য থেকে বাছাই করা হয়েছে ২৭টি প্রবন্ধ। এগুলো উপস্থাপন করা হয় হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স, ব্যবস্থাপনা-১, ব্যবস্থাপনা-২, মার্কেটিং ও পর্যটন- এ পাঁচটি ট্র্যাকে। 

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো.

আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. আব্দুল আওয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান।

সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নূর উন নবী। শিল্প খাতের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে ‘বিজনেস ব্রিলিয়ান্স’ সেগমেন্টে বক্তব্য দেন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সম্মেলন করার পরিকল্পনা করি। এরই অংশ হিসেবে আজ ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পর্যায়ক্রমে মানবিক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞান অনুষদে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। আমার বিশ্বাস, এই সেশনগুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আরোহনের সুযোগ ও নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা বাড়াতে সহায়ক হবে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “অর্থ কোন বিষয় নয়, বিষয় হলো উদ্ভাবনী আইডিয়া। ইফেক্টিভ সব আইডিয়া জেনারেট করতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব। একটু তাকালেই খুলনার আকিজ উদ্দিনকে দেখো, যার জন্ম খুলনার ফুলতলায়। ব্রিটিশ আমলে সে কলকাতায় চলে যায় চাকরি খুঁজতে। মাত্র ১৬ টাকা নিয়ে সেখানে গিয়ে থাকার কোন জায়গা না পেয়ে শিয়ালদা স্টেশনে থাকতে শুরু করে।”

তিনি আরো বলেন, “আকিজ সাহেব দিনে মাত্র ছয় আনার ছাতু খেয়ে দিন পার করতেন। এভাবেই আস্তে আস্তে ছয় আনার একটা ভ্যারাইটিজ দোকান খুলে বসেন, যেখানে সকল পণ্যের মুল্য ছয় আনা। নাইনটি নাইন শপের মতো তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আকিজ সাহেবের ছয় আনার দোকান। এভাবে যদি নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করা যায়, তাহলেই অর্থ কোন ফ্যাক্টর নয়।”

উপাচার্য বলেন, “রাজনৈতিক গতিশীলতা বদলে গেছে। প্রথাগত রাজনীতি ভবিষ্যতে আর কার্যকর হবে না। ভবিষ্যতের রাজনীতি হবে অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। তোমাদের অর্থনৈতিক অবস্থান যত শক্তিশালী হবে, ততই তুমি দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। বিশ্বকে শাসন করতে পারবে।”

ঢাকা/আতিক/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য প ব প রব ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ