ইউএপিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিযোগিতা
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে প্রথমবারের মতো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-বিষয়ক প্রতিযোগিতা─‘জেআরসি মেমোরিয়াল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনটেস্ট: CENOVUS 1.0’ গত শনিবার (১২ এপ্রিল ২০২৫) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) পুরকৌশল বিভাগের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এ আয়োজন করেছিল। আয়েোজনে অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে ছিল প্রথম আলো। দিনব্যাপী এই আয়োজনে সারা দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপ ও পর্বে নিজেদের নিবন্ধন অনুযায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। এই আয়োজনে দেশব্যাপী পুরকৌশল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখর ছিল ইউএপির নিজস্ব ক্যাম্পাস।
শনিবার সকাল ৯টায় এই চমৎকার আয়োজনের পর্দা ওঠে এবং বিকেলে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের স্বনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যক্তিত্ব ও ইউএপির ইমেরিটাস অধ্যাপক এম শামীম জামান বসুনিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান স্থপতি মাহবুবা হক, উপাচার্য কামরুল আহসান, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল, পুরকৌশল বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নেহরীন মাজেদসহ অন্য সম্মানিত ফ্যাকাল্টি সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠানের থিমজুড়ে এবং আলোচনা সভায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্মরণে বিশেষ আলোকপাত করা হয়।
CENOVUS 1.
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বিশেষ আলোচনা সভা ও শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকে স্মরণে রেখে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধান অতিথি ও দেশবরেণ্য পুরকৌশল ব্যক্তিত্ব, ইউএপি সিভিলের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামীম জামান বসুনিয়া বলেন, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল প্রতিযোগিতার চিন্তাভাবনা জে আর সি স্যার দেন আরও ৮-১০ বছর আগে। সেই অনুসারেই তাঁর স্মরণে ইউএপিতে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। জে আর সি স্যার বলে গেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ নোবেল পুরস্কার পাবেন গবেষণালব্ধ কাজের জন্য। CENOVUS-এর মতো প্রতিযোগিতার কোনো এক বিজয়ীই হয়তো দেখা গেল সেই সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছেন। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিযোগিতা খুবই প্রয়োজনীয়তা বহন করে।
অনুষ্ঠানটির বিশেষ অতিথি প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘জে আর সি স্যার যখন বুয়েট কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক, তখন থেকেই স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। স্যার বলে গিয়েছেন, “If you have integrity, nothing else matters.” প্রতিযোগিতাও একই অর্থ বহন করে। যত বেশি নিজেকে এগিয়ে রাখা যায়, ভবিষ্যতের জন্য তত তৈরি হওয়া যায়।’
ইউএপির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল বলেন, জে আর সি স্যার মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর এসেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট তাঁর রেখে যাওয়া ঐতিহ্য ও পদচিহ্নকে ধারণ করেছে। গুরুকে অনুসরণ করার এই দৃষ্টান্ত বর্তমান সময়ে নজিরবিহীন বটে। Cenovus নামের সঙ্গে 1.0 সংখ্যাটি একটা লক্ষ্য প্রকাশ করছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এই আয়োজনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বহন করে।
CENOVUS 1.0-এর আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক কর্তৃপক্ষ ও ইউএপি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এবং সহযোগী হিসেবে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সহায়ক ৯টি ক্লাব, যথাক্রমে ACI-UAP স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, এনভায়রনমেন্ট ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ক্লাব, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, সিই ম্যাথ ক্লাব, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, আর্ট ও ফটোগ্রাফি ক্লাব, সিই কালচারাল ক্লাব-চিহ্ন, সিই স্পোর্টস ক্লাব।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পুরকৌশল বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো আয়োজনটি সফল হয়েছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে