প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে প্রথমবারের মতো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-বিষয়ক প্রতিযোগিতা─‘জেআরসি মেমোরিয়াল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনটেস্ট: CENOVUS 1.0’ গত শনিবার (১২ এপ্রিল ২০২৫) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) পুরকৌশল বিভাগের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এ আয়োজন করেছিল। আয়েোজনে অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে ছিল প্রথম আলো। দিনব্যাপী এই আয়োজনে সারা দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপ ও পর্বে নিজেদের নিবন্ধন অনুযায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। এই আয়োজনে দেশব্যাপী পুরকৌশল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখর ছিল ইউএপির নিজস্ব ক্যাম্পাস।

শনিবার সকাল ৯টায় এই চমৎকার আয়োজনের পর্দা ওঠে এবং বিকেলে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের স্বনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যক্তিত্ব ও ইউএপির ইমেরিটাস অধ্যাপক এম শামীম জামান বসুনিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান স্থপতি মাহবুবা হক, উপাচার্য কামরুল আহসান, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল, পুরকৌশল বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নেহরীন মাজেদসহ অন্য সম্মানিত ফ্যাকাল্টি সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠানের থিমজুড়ে এবং আলোচনা সভায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্মরণে বিশেষ আলোকপাত করা হয়।

CENOVUS 1.

0 পুরকৌশল দক্ষতাবিষয়ক মোট সাতটি পর্ব—ট্রাসেল ম্যানিয়া, গণিত অলিম্পিয়াড, পোস্টার বোর্ড, মেকানিকস মাস্টার, ক্যাড সুপারিয়র, ফটোনোভাস ও কুইক বাজ আয়োজিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন পর্ব মিলিয়ে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতার মোট প্রাইজমানি নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই আয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন পর্বে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন যথাক্রমে ডুয়েটের মো. জামিল মাহমুদ আবদুল্লাহ (মেকানিকস মাস্টার-সিনিয়র) ও টিম ট্রাফিক ট্রেকটিসিয়ানস মো. জাকির হোসেন (পোস্টার বোর্ড), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইফতেখারুল ইসলাম মুন্না (ফটোনোভাস), কুয়েটের আবিদ হাসান (গণিত অলিম্পিয়াড), সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টিম ব্রিজ ব্লিন্ডার্স মো. এহসানুল হক, মো. হৃদয় হোসেন ও মো. শাফিউল আলম শুভ (ট্রাসেল ম্যানিয়া) এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সাইদুর রহমান (অটোক্যাড), সাইমুম হাসান (মেকানিকস মাস্টার-জুনিয়র), টিম নো ব্রেইনারসের মো. কামরুল হাসান হৃদয় ও মো. মিজানুর রহমান (কুইজ)। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও প্রাইজমানি তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বিশেষ আলোচনা সভা ও শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকে স্মরণে রেখে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধান অতিথি ও দেশবরেণ্য পুরকৌশল ব্যক্তিত্ব, ইউএপি সিভিলের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামীম জামান বসুনিয়া বলেন, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল প্রতিযোগিতার চিন্তাভাবনা জে আর সি স্যার দেন আরও ৮-১০ বছর আগে। সেই অনুসারেই তাঁর স্মরণে ইউএপিতে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। জে আর সি স্যার বলে গেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ নোবেল পুরস্কার পাবেন গবেষণালব্ধ কাজের জন্য। CENOVUS-এর মতো প্রতিযোগিতার কোনো এক বিজয়ীই হয়তো দেখা গেল সেই সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছেন। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিযোগিতা খুবই প্রয়োজনীয়তা বহন করে।

অনুষ্ঠানটির বিশেষ অতিথি প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘জে আর সি স্যার যখন বুয়েট কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক, তখন থেকেই স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। স্যার বলে গিয়েছেন, “If you have integrity, nothing else matters.” প্রতিযোগিতাও একই অর্থ বহন করে। যত বেশি নিজেকে এগিয়ে রাখা যায়, ভবিষ্যতের জন্য তত তৈরি হওয়া যায়।’

ইউএপির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল বলেন, জে আর সি স্যার মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর এসেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট তাঁর রেখে যাওয়া ঐতিহ্য ও পদচিহ্নকে ধারণ করেছে। গুরুকে অনুসরণ করার এই দৃষ্টান্ত বর্তমান সময়ে নজিরবিহীন বটে। Cenovus নামের সঙ্গে 1.0 সংখ্যাটি একটা লক্ষ্য প্রকাশ করছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এই আয়োজনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বহন করে।

CENOVUS 1.0-এর আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক কর্তৃপক্ষ ও ইউএপি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এবং সহযোগী হিসেবে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সহায়ক ৯টি ক্লাব, যথাক্রমে ACI-UAP স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, এনভায়রনমেন্ট ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ক্লাব, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, সিই ম্যাথ ক্লাব, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, আর্ট ও ফটোগ্রাফি ক্লাব, সিই কালচারাল ক্লাব-চিহ্ন, সিই স্পোর্টস ক্লাব।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পুরকৌশল বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো আয়োজনটি সফল হয়েছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ