যেমন খুশি তেমন আসার অফিস সিবিএ নেতাদের
Published: 17th, April 2025 GMT
কেউ মাসের সব দিনই অনুপস্থিত। কেউ মাসে দু-চার দিন অফিসে পা রাখলেও আসছেন দেরিতে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এই ধারা চললেও মাস ফুরালে সময়মতো পাচ্ছেন বেতন। তারা সবাই ঢাকা ওয়াসার বিএনপিপন্থি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা।
যেটুকু সময় ওয়াসার কার্যালয়ে তাদের দেখা যায়, সে সময়টা দলীয় কার্যক্রম বা বদলি-নিয়োগ তদবিরেই ব্যস্ত থাকেন। তাদের দাপট এতটাই বেশি, কেউ কিছু বলার সাহস দেখান না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বদলে উল্টো তাদের বাড়তি আবদার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিস ফাঁকি ঠেকাতে ২০১৮ সালে ওয়াসার সে সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করেন। তখন থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বায়োমেট্রিক যন্ত্রে হাতের আঙুল চেপে বা মুখ দেখিয়ে কার্যালয়ে উপস্থিতি জানান দিতেন। আগের ওয়াসা প্রশাসনও হাজিরার ব্যাপারে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। তখন ওয়াসায় সিবিএ (কালেক্টিভ বার্গেনিং অথরিটি) নেতাদের দৌরাত্ম্য বাড়তে দেননি তাকসিম। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থি সিবিএ নেতারা রাতারাতি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দাপট দেখিয়ে ওয়াসা ভবনের চারতলায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি কার্যালয়ও বরাদ্দ নেন তারা। এতে সিবিএ নেতাদের প্রভাব আরও বেড়ে যায়।
সিবিএর শীর্ষ তিন নেতার হাজিরার তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, কর্মস্থলে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত থাকছেন সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন পাটোয়ারী। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত আট মাসে মাত্র চার দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ওই চার দিনও তিনি নির্ধারিত সময়ের পর কর্মস্থলে হাজির হন। হাজিরা তথ্য বিবরণীতে ওই চার দিন সম্পর্কে লেখা ‘লেট ডে’। মনির পাম্প অপারেটর হিসেবে কর্মরত। তাঁর কর্মস্থল মডস জোন-৬ (শাহবাগ-মতিঝিল-খিলগাঁও এলাকা)।
মনিরের হাজিরা বিবরণীতে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে তাঁর কর্মদিবস ছিল ২১ দিন। আট দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি, আরেক দিন ছিল ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটি। ওই মাসের প্রতিদিনই তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। একইভাবে গত অক্টোবরের ২১ কর্মদিবসের প্রতিদিনই তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন। দু’দিন দুর্গাপূজা আর আট দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। একইভাবে নভেম্বরের ২০ কর্মদিবসের ২০ দিন ও ডিসেম্বরের ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ২১ দিন, জানুয়ারির ২২ দিন, ফেব্রুয়ারির ২০ কর্মদিবসই ছিলেন অনুপস্থিত। আর গত মার্চের ১৯ কর্মদিবসের মধ্যে ১৫ দিন ছিলেন অনুপস্থিত। ওই মাসে মাত্র চার দিন তিনি অফিসে গেছেন, তাও দেরিতে।
একইভাবে সিবিএর সভাপতি আজিজুল আলম খান গত আট মাসে অফিস করেছেন মাত্র ১১ দিন। গত সেপ্টেম্বরে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই অফিসে ছিলেন অনুপস্থিত। বাকি সাত দিন অফিসে যান দেরিতে। অক্টোবরে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ১৭ দিন ছিলেন অনুপস্থিত। বাকি চার দিন অফিসে গেছেন দেরিতে। আবার নভেম্বরে ২০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিদিনই ছিলেন অনুপস্থিত। একইভাবে ডিসেম্বরের ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ২১ দিন, জানুয়ারির ২২ কর্মদিবসের মধ্যে ২২ দিন, ফেব্রুয়ারির ২০ কর্মদিবসের মধ্যে ২০ দিন এবং মার্চের ১৯ কর্মদিবসের মধ্যে ১৯ দিনই ছিলেন অনুপস্থিত। তিনি ওয়াসার রাজস্ব পরিদর্শক।
সিবিএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গত আট মাসে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন মাত্র পাঁচ দিন। তিনিও প্রতিদিন কর্মস্থলে যান দেরিতে। তাঁর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ওভারটাইমও আছে। এই ওভারটাইমের টাকাও তিনি পেয়েছেন। তিনি সেপ্টেম্বরের ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ১৬ দিন ছিলেন অনুপস্থিত। ৫ দিন দেরিতে অফিসে গেছেন। ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ওভারটাইম করেছেন। ওই মাসে তাঁর মোট কর্মঘণ্টা ছিল ৯ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট। আর গত মার্চে তিনি ১৯ কর্মদিবসের সব দিনই ছিলেন অনুপস্থিত। তাঁর পদবি অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি। তাঁর কর্মস্থল মডস জোন-২ (পুরান ঢাকা)। প্রায় একই রকম হাজিরার হাল জোন-২-এর রাজস্ব পরিদর্শক বজলুল করিম, উচ্চমান সহকারী মাহবুবুর রহমান ও মো.
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার সিবিএর সভাপতি আজিজুল আলম খান সমকালকে বলেন, ‘কিছু বায়োমেট্রিক মেশিন বিকল। অনেকের হাজিরা বায়োমেট্রিক মেশিন নেয় না। তারা হাজিরা খাতায় সই করেন। আমি নিজেও হাজিরা খাতায় সই করি। হয়তো অসুস্থতাজনিত করণে দু-একদিন অফিসে যেতে একটু দেরি হতে পারে।’
ঢাকা ওয়াসার এমডি ফজলুর রহমান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব, এ রকম ঘটনা ঘটছে কিনা। কেউ এ রকম করে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর দ ন অফ স একইভ ব স ব এর ম বর র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।