ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ১০২ জন। গতবারের তুলনায় এবার ২৭ পরীক্ষার্থী কমেছে। এবার এই বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে ৭৫ জন। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক গতকাল বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এসেছিলেন এসএসসি পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি কাজে। সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই তাঁদের বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী কম।

এসএসসি পরীক্ষার্থী কমার এই চিত্র শুধু গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়েরই নয়, চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশেই গত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থী অনেক বেশি কমেছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। পরীক্ষায় অনুপস্থিতিও এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি।

কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান

একদিকে পরীক্ষার্থী কম, অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি নিয়ে এবার নানা আলোচনা চলছে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো অস্পষ্ট। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে একাধিক কারণের কথা উঠে এসেছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গতবার পাসের হার তুলনামূলক বেশি ছিল (৮৩ শতাংশ)। আর পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে গেছে। এ জন্যই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। তবে শিক্ষকদের ভাষ্য, এর অন্যতম একটি কারণ হলো করোনা সংক্রমণের প্রভাব।

করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে।

অন্যদিকে আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণ থাকতে পারে। এ জন্য এ বিষয়ে একটি গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

১০ এপ্রিল সারা দেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন।

গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার

শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখের বেশি, ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ, ২০২২ সালে প্রায় ২০ লাখ, ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ও ২০২০ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ২০ লাখ।

এদিকে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার অনুপস্থিত ছিল ২৮ হাজার ৯৪৩ জন। অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীরা পরের পরীক্ষাগুলোতেও অনুপস্থিত থাকে। এই হিসাব বলছে, দ্বিতীয় দিনেও নতুন করে আরও অন্তত দুই হাজারের মতো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে। এবার কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা গ্রহণের কারণে অনুপস্থিতির সংখ্যা তুলনামূলক কিছু বেশি হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না। তবে সব মিলিয়ে এসব কারণ উদ্‌ঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গবেষণার মাধ্যমে এটি করতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে নীতি তৈরির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ট পর ক ষ র থ ত পর ক ষ র থ ক পর ক ষ পর ক ষ য় ই পর ক ষ কর ন র স অন ক ই ২০ ল খ প স কর প রথম গতব র

এছাড়াও পড়ুন:

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভর্তির দরকারি তারিখ—

১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।

২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।

৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।

ভর্তির যোগ্যতা—

১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd

ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —

১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।

২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—

১. দুই কপি ছবি।

২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।

ভর্তি ও অন্যান্য ফি—

অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,

রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,

কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,

ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,

পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,

প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,

মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।

বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।

২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।

# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি
  • মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন