এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কম, অনুপস্থিতিও বেশি, কারণ কী
Published: 17th, April 2025 GMT
ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ১০২ জন। গতবারের তুলনায় এবার ২৭ পরীক্ষার্থী কমেছে। এবার এই বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে ৭৫ জন। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক গতকাল বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এসেছিলেন এসএসসি পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি কাজে। সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই তাঁদের বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী কম।
এসএসসি পরীক্ষার্থী কমার এই চিত্র শুধু গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়েরই নয়, চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশেই গত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থী অনেক বেশি কমেছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। পরীক্ষায় অনুপস্থিতিও এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি।
কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমানএকদিকে পরীক্ষার্থী কম, অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি নিয়ে এবার নানা আলোচনা চলছে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো অস্পষ্ট। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে একাধিক কারণের কথা উঠে এসেছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গতবার পাসের হার তুলনামূলক বেশি ছিল (৮৩ শতাংশ)। আর পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে গেছে। এ জন্যই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। তবে শিক্ষকদের ভাষ্য, এর অন্যতম একটি কারণ হলো করোনা সংক্রমণের প্রভাব।
করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে।
অন্যদিকে আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণ থাকতে পারে। এ জন্য এ বিষয়ে একটি গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
১০ এপ্রিল সারা দেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন।
গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারশিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখের বেশি, ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ, ২০২২ সালে প্রায় ২০ লাখ, ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ও ২০২০ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ২০ লাখ।
এদিকে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার অনুপস্থিত ছিল ২৮ হাজার ৯৪৩ জন। অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীরা পরের পরীক্ষাগুলোতেও অনুপস্থিত থাকে। এই হিসাব বলছে, দ্বিতীয় দিনেও নতুন করে আরও অন্তত দুই হাজারের মতো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে। এবার কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা গ্রহণের কারণে অনুপস্থিতির সংখ্যা তুলনামূলক কিছু বেশি হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না। তবে সব মিলিয়ে এসব কারণ উদ্ঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গবেষণার মাধ্যমে এটি করতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে নীতি তৈরির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট পর ক ষ র থ ত পর ক ষ র থ ক পর ক ষ পর ক ষ য় ই পর ক ষ কর ন র স অন ক ই ২০ ল খ প স কর প রথম গতব র
এছাড়াও পড়ুন:
ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন
পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।
আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।
২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন
আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সময়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’
আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’
একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়
২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।
আবু সালেহ আহমেদ