কুড়িগ্রামের ৭ জেলে ৬ মাস ভারতের কারাগারে
Published: 17th, April 2025 GMT
মাছ ধরতে গিয়ে ৬ মাস ধরে ভারতের জেলে আটকা রয়েছেন কুড়িগ্রামের ৭ জন জেলে। জেলার রাজিবপুর উপজেলার জিঞ্জিরাম নদী হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে মাছ ধরতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় হাজতে আটক রয়েছেন তারা। এই ৭ জন জেলের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায়। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে হাজতে আটক থাকলেও কীভাবে তাদের ফেরানো যায়, তা নিয়ে কূল-কিনারা করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তবাহিনী বিএসএফ। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না জেলে পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে। আটক জেলেরা হলেন, চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের হরিনের বন্দ এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), রমনা ব্যাপারী পাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), শামছুল হকের ছেলে মীর জাহান আলী (৪৫), মৃত এছাহক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), পকের আলীল ছেলে আমির আলী (৩৫), রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ব্যাপারী পাড়ার জরিপ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর হোসেন (২০) ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চর বকবান্ধা এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।
আরো পড়ুন:
হিলি ইমিগ্রেশনে কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার
আমরা এমনিতেই ফর্সা-সুন্দর, উর্বশীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা
রমনা মডেল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, হাজতে আটকরা পেশায় জেলে। তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বৈধভাবে ভারতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা বৈধভাবে যেতে না পেরে অবৈধভাবে মাছ ধরতে গিয়ে আটক হন।
গোপনে স্ত্রীকে পাঠানো মীর জাহান আলীর চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে তারা মেঘালয়ের কালাইর চর পেট্রোল থানা আমপাতিতে রয়েছেন। চলতি মাসে তাদের হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তাদের স্থায়ী সাজা দেওয়া হবে। আটক জেলে পরিবারগুলো উৎকণ্ঠতায় দিন কাটাচ্ছে।
আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৩ নভেম্বর জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘‘জেলেদের সন্ধান পাওয়ার পর চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ছাড়িয়ে আনতে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই যেন দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’’
আটক জেলে মীর জাহানের স্ত্রী ববিতা বেগম বলেন, ‘‘ঘরে খাবার নেই। আমার স্বামী কোনোরকম সংসার চালাতে বলে মাছ শিকার করতে চলে যান। পরে জানতে পারি, তারা ভারতে আটক হয়েছেন। সন্তানদের মুখে ঠিকভাবে খাবার দিতে পারছি না। বড় সন্তানকে আমার বাবার বাড়িতে রেখে এসেছি।’’
আরেক আটক জেলের স্ত্রী কাজলী বেগম বলেন, ‘‘আমরা গরীব মানুষ। নদীতে মাছ শিকার করা আমাদের পেশা। প্রতি বছর আমার স্বামী বৈধভাবে ভারতে গেলেও এবার ব্যতিক্রম ঘটে। গত ৩ নভেম্বর মাছ শিকার করতে গিয়ে ভারতে আটক হন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের একটি গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।’’
রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, ভারতের জেলে থাকা জেলেদের রাজিবপুরের জিঞ্জিরাম নদীর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, জেলেদের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/সৈকত/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র আটক জ ল এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব