‘হোম অ্যালোন’ সিনেমা থেকে ট্রাম্পের দৃশ্যটি বাদ দেওয়া হোক, বললেন নির্মাতা
Published: 17th, April 2025 GMT
১৯৯২ সালের ঘটনা। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামের আগে ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট’ যুক্ত হয়নি। তিনি ছিলেন কেবলই একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলের মালিক। সে সময় ‘হোম অ্যালোন টু: লস্ট ইন নিউইয়র্ক’–এ অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিন দশকেরও বেশি পুরোনো দৃশ্যটি আবারও আলোচনায় এসেছে। অনেকে সিরিজটি থেকে সাত সেকেন্ডের দৃশ্যটি ফেলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন নির্মাতা ক্রিস কলম্বাস। সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনিও চান, দৃশ্যটি বাদ দেওয়া হোক।
এর পরিণতি নিয়েও ওয়াকিবহাল ক্রিস কলম্বাস। মজার ছলে বলেন, ‘আমি দৃশ্যটি কর্তন করতে পারব না। যদি কর্তন করি তাহলে সম্ভবত দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। হয়তো আমাকে ইতালি কিংবা অন্য কোথাও যেতে হবে।’
কী আছে সেই দৃশ্যে
নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলের সামনে ছবির একটা বড় অংশের শুটিং হয়েছে প্লাজা হোটেলে। আর সেখানে একটি দৃশ্যে দেখা গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ছবিতে তিনি নিজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
ছবিতে দেখা গেছে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন মূল চরিত্র কেভিনকে প্লাজা হোটেলের লবির দিকে পথ চিনিয়ে নিয়ে গেছেন। ২০১৯ সালে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘হোম অ্যালোন টু’ ছবিতে তাঁকে যেভাবে দেখা গেছে, তাতে তিনি অত্যন্ত গর্বিত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তখন আমি তরুণ ছিলাম। আর ছবিটা অভাবনীয় হিট হয়। এখনো বড়দিনের সবচেয়ে সফল ছবিগুলোর একটি (হোম অ্যালোন টু)। এই ছবির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের।’
এই ছবির মূল চরিত্র কেভিন নামের এক শিশু। বড় পর্দায় সেই চরিত্রকে রূপ দেন ম্যাকলি কালকিন। সে মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলে। তারপর হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে হোটেলে। তখন সে ওভারকোট আর লাল টাই পরা এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে, হোটেলের লবি কোথায়। তখন সেই মানুষটি কেভিনকে বলেন, ‘নিচে যাও, তারপর বাঁ দিকে।’ ছবির সেই লোকটা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ক্রিস কলম্বাস পরিচালিত ‘হোম অ্যালোন টু’ ছবি বানাতে খরচ হয়েছে ২৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর ১৯৯২ সালের বড়দিন উপলক্ষে মুক্তির পর ছবিটি আয় করেছে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান।
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’