মো. লেনিনের আড়াই একর জমিতে এবার মিষ্টিকুমড়া হয়েছে প্রায় ২৫০ মণ। গত বছরও তিনি প্রতিটি কুমড়া বিক্রি করেছেন ১৮-২০ টাকায়। এবার দাম পাচ্ছেন ৮-১০ টাকা করে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি হাওরের এই কৃষক। একই হাওরের অন্য কৃষকের অবস্থাও ভিন্ন নয়। তাদের অনেকের জমিতে পড়ে আছে পচে যাওয়া মিষ্টিকুমড়া।
বুধবার বড়িবাড়ি হাওরে তাজা মিষ্টিকুমড়ার স্তূপ দেখা যায়। পাশেই ফেলে রাখা অসংখ্য পচা মিষ্টিকুমড়া। চাষিরা জানিয়েছেন, বিপুল পরিমাণ মিষ্টিকুমড়া তাদের এবার বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে। স্থানীয় পাইকাররা এসব কিনে অন্য জেলায় সরবরাহের জন্য ট্রাকে তুলছেন। 
কৃষক লেনিনের কথা, এবার দরপতনের কারণ কিছুটা বোঝা গেল। তিনি বলেন, এবার সব ধরনের শাকসবজির দামই অনেক কম ছিল। রোজা চলার মধ্যেই তাঁর জমির মিষ্টিকুমড়া আহরণের উপযোগী হয়। কিন্তু তখন বাজারে চাহিদা ছিল না বললেই চলে। এসব কারণ দেখিয়ে পাইকাররা এখন আগের দামে মিষ্টিকুমড়া কিনতে চান না। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁর মতো সব কৃষক।
একই এলাকার কৃষক বিল্লাল মিয়ার কণ্ঠেও হতাশার সুর। সামান্য জমিতে প্রায় ৫০ মণ মিষ্টিকুমড়া ফলিয়েই বিপাকে পড়েছেন। বিক্রি করতে গিয়ে গতবারের অর্ধেক দাম পাচ্ছেন। 
লেনিনের ক্ষেত থেকে মিষ্টিকুমড়া কেনেন স্থানীয় পাইকার গোলাম কিবরিয়া। তিনি এবার ১০ টন মিষ্টিকুমড়া কিনেছেন। সেগুলো শ্রমিকের সহায়তায় ট্রাকে তুলছিলেন। গোলাম কিবরিয়ার ভাষ্য, কিশোরগঞ্জে যে পরিমাণ মিষ্টিকুমড়ার ফলন হয়, তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা যায় না। প্রতি বছরই ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকেন। এবারও টাঙ্গাইলের আড়তে পাঠানোর জন্য তিনি ১০ টন কিনেছেন। 
এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, কৃষিপণ্যের দাম বেশি থাকলে কৃষকের যেমন লাভ হয়, ব্যবসায়ীদেরও ভালো লাভ হয়। এবার দাম এত কমে গেছে, লাভের হারও স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।
বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ মিষ্টিকুমড়া দৃষ্টিশক্তির জন্য, বিশেষ করে রাতকানা রোগীদের জন্য উপকারী। এসব তথ্য জানিয়ে জেলা খামারবাড়ির সহকারী উপপরিচালক (শস্য) মো.

শাহীনুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানি এবার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে মিষ্টিকুমড়ার প্রচুর আবাদ করিয়েছে। এতদিন কৃষক ভালোই দাম পাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছর, বিশেষ করে রবি মৌসুমে শাকসবজির প্রচুর ফলন হওয়ায় দামও পড়ে যায়। মিষ্টিকুমড়া আহরণের সময় রোজার মাস ছিল। বাজারে সরবরাহের তুলনায় বিক্রি খুবই কম হয়। এসবেরই প্রভাব পড়েছে মিষ্টিকুমড়ায়। তাই কৃষকরা প্রত্যাশা মতো দাম পাচ্ছেন না। ফলে অনেকে পরিপক্ব মিষ্টিকুমড়া জমিতে ফেলে রাখছেন। মাটির সংস্পর্শে এসব মিষ্টিকুমড়া পচে গেছে।
শাহীনুল ইসলামের ভাষ্য, স্থানীয়ভাবে ছয় মাস পর্যন্ত পরিপক্ব মিষ্টিকুমড়া সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এবার বিপুল উৎপাদিত মিষ্টিকুমড়া রাখারও উপায় নেই কৃষকদের। কিশোরগঞ্জেও এ সবজি সংরক্ষণের হিমাগার বা বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে নির্মাণকাজের সময় গ্যাস লাইনে ছিদ্র, সরবরাহ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজের সময় এক্সকাভেটরের (খননযন্ত্র) আঘাতে গ্যাসের সংযোগ লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ। এতে জেলা শহরের প্রায় ১৫ হাজার আবাসিক-বাণিজ্যিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে শহরের উলচাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছে বিজিডিসিএলের কারিগরি দল। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গেছে।

বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপমহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল চারটার দিকে শহরের ভাদুঘর থেকে উলচাপাড়া রোডের গ্যাস সঞ্চালনের ৬ ইঞ্চি লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। গ্যাসের সঞ্চালন লাইন সচল রেখে মেরামত করলে ওই স্থানে আগুন ধরে যাবে। তাই সদর উপজেলার ঘাটুরা অংশ থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ দিকে জেলা শহরের সব আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা ভেবে কারিগরি দল দ্রুত মেরামতকাজ শুরু করেছে। ২০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে শহরের মধ্যেই প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।

বাখরাবাদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। আজ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উলচাপাড়া অংশে খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছিল। সে সময় ওই যন্ত্রের আঘাতে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ৬ ইঞ্চি পাইপ ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। বিষয়টি বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাদের কারিগরি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গ্যাসের সংযোগ লাইন মেরামত করতে সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকায় থাকা গ্যাস সঞ্চালন লাইন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরসহ পৌর এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

কালাইশ্রীপাড়ার মনির হোসেন বলেন, ‘বিকেল চারটার পর থেকে গ্যাস নেই। রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। শিশুদের জন্য কোনো খাবার রান্না করতে পারছেন না আমার স্ত্রী।’

কাজীপাড়ার বাসিন্দা তমালিকা দেবনাথ বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার নাশতা বানাতে রান্নাঘরে যাই। গিয়ে দেখি ‍চুলায় গ্যাস আসছে না। কবে আসবে জানি না। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। ছোট বাচ্চারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে।’

বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার রাজস্ব বিভাগের উপব্যবস্থাপক গোলাম মোক্তাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘উলচাপাড়ায় গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। তাই ঘাটুরা থেকে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পুরো শহরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের কারিগরি দল কাজ শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতের বৃষ্টিতে ৪৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে
  • ইলিশ রক্ষায় জাটকা শিকারে আজ থেকে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা
  • যবিপ্রবিতে বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫ ঘণ্টা পর গ্যাস সরবরাহ শুরু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে নির্মাণকাজের সময় গ্যাস লাইনে ছিদ্র, সরবরাহ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহক
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ