চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, কে কার কাছ থেকে কী কেনে
Published: 19th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ২০২৪ সালে ৪৩৯ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে। এর বিনিময়ে চীনের কাছে তারা বিক্রি করেছে ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য। এই যে কেনা ও বেচার মাঝে ২৯৫ বিলিয়ন বা ২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ব্যবধান, সেটাই হলো দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি।
এই ঘাটতি মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর অর্থ হলো, চীনের যেসব পণ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হবে, সেগুলো কিনতে এখন মূল দামের চেয়ে ২ দশমিক ৪৫ গুণ বেশি দাম দিতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্য এখন আরও দামি হবে। ফলে চীনের পণ্য এখন মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। চীনও অবশ্য বসে নেই; তারাও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার এই ‘ইটের বদলে পাটকেল মারার’ নীতির কারণে যা ঘটবে তা হলো, বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি। পরিণামে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর ও জামা–কাপড়ের দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। সেই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে কী বিক্রি করে২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। তারা চীনের কাছে যেসব পণ্য বিক্রি করেছে, সেগুলো হলো খনিজ তেল, তেলবীজ, যন্ত্র ও বিমান। একক পণ্য হিসেবে দেখা যায়, চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে সয়াবিন। সয়াবিন মূলত শূকরের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দেখে নেওয়া যাক, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে মূলত আর কোন কোন পণ্য বিক্রি করেছে:
খনিজ তেল (১৩.
তেলবীজ ও তেলযুক্ত ফল (১১.৫ বিলিয়ন ডলার): গত বছরে চীনের কাছে মোট ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের তেলবীজ ও তেলযুক্ত ফল বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ (১১.৫ বিলিয়ন): গত বছরে চীনের কাছে মোট ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের এসব সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি তার মোট রপ্তানির ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার ও যন্ত্রপাতি (১০.৫ বিলিয়ন): এসব উপাদান বিক্রি করেছে মোট ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিমান, মহাশূন্যযান ও যন্ত্রাংশ (১০.২ বিলিয়ন ডলার): এসব সরঞ্জাম বিক্রি করেছে ১ হাজার ২০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
চীনের কাছ থেকে কী কেনে যুক্তরাষ্ট্র২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ৪৩৯ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে। মূলত দেশটির কাছ থেকে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও চিপ কিনে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ (১২৩.৮ বিলিয়ন) : চীনের কাছ থেকে দেশটি গত বছর ১২ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে; মোট রপ্তানির যা প্রায় ২৮ দশমিক ২ শতাংশ।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার, যন্ত্র ও যান্ত্রিক সরঞ্জাম (৮২ বিলিয়ন): গত বছর চীনের কাছ থেকে এসব পণ্য কিনেছে ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের; মোট আমদানির ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
খেলনা, গেম ও ক্রীড়াসামগ্রী (৩০ বিলিয়ন): চীন এসব সরঞ্জাম কিনেছে মোট ৩ হাজার কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্লাস্টিক (১৯.৩ বিলিয়ন): চীনের কাছ থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এসব পণ্য কিনেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির যা প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
আসবাব, বিছানাপত্র ও কুশন (১৮.৫ বিলিয়ন): যুক্তরাষ্ট্র এসব জিনিস কেনে মোট ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের; মোট আমদানির যা প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় ও টেক্সাস; এসব রাজ্য যথাক্রমে ১২২ দশমিক ৭৬ বা ১২ হাজার ২৭৬ কোটি ডলার, ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার ও ৩৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।
সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে টেক্সাস; তারা মোট ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যালিফোর্নিয়া; তারা মোট রপ্তানি করে ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য। তৃতীয় স্থানে আছে ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্যে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল ৮ দশম ক সরঞ জ ম গত বছর আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।