কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ চার বছর পর গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হয়ে এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এবার মোট তিনটি ইউনিটে নেওয়া হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা।

এর মধ্যে আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে এবারের ভর্তিযুদ্ধ। আজ বেলা তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এ ছাড়া ২৫ এপ্রিল বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এবার প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৩০টি আসনের বিপরীতে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’—তিনটি ইউনিটে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৬৬ হাজার ৪০২টি। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কোটবাড়ী এলাকাসহ কুমিল্লা নগরের ৩০টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর ‘এ’ ইউনিটে ৩৫০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থী। প্রতিটি আসনের জন্য লড়বেন ৯৩ জন। ‘সি’ ইউনিটে ২৪০টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৯ হাজার ৯৫২টি। ফলে আসনপ্রতি প্রতিযোগিতা হবে ৪১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে। এ ছাড়া ‘বি’ ইউনিট (কলা, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদ) পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে ২৫ এপ্রিল বিকেল ৪টায়। এই ইউনিটে ৪৪০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ২৩ হাজার ৭৯২ জন। এতে প্রতিটি আসনের জন্য লড়বেন ৫৪ জন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, করোনা মহামারির সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছপদ্ধতির মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। এক বছর পর থেকে বিষয়টিতে বিভিন্ন আপত্তি আসতে শুরু করে। এ বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হওয়ার জন্য জোর দাবি ওঠে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। এরপর কয়েক দফা সিদ্ধান্ত পরির্বতন হলেও সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্বতন্ত্রভাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে সরকার, আবেদন শুরু১৫ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে আমাদের সব প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে।

শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এরই মধ্যে পরীক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। প্রায় ২০ মিনিট এ অবস্থার পর বৃষ্টি বন্ধ হয়। ফলে নির্বিঘ্নেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের বেশ তৎপরতা দেখা গেছে।

মরিয়ম আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন নোয়াখালী থেকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য গতকালই কুমিল্লায় এসেছি বাবার সঙ্গে। রাতে কুমিল্লা শহরের এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। এ জন্য তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই।’

কিশোরগঞ্জ থেকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য এসেছেন মেহেদী হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে কুমিল্লায় এসে পৌঁছেছি। রাতে একটি আবাসিক হোটেলে ছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কয়েক মাস ধরে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, পরীক্ষা ভালো দিতে পারব।’

এর আগে গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় পরীক্ষা নিয়ে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো.

হায়দার আলী পরীক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১৯ ও ২৫ এপ্রিল, মানতে হবে ৭টি নিয়ম১৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। প্রথম ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকলেও পরবর্তী সময়ে বর্ধিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (দিন–রাত যেকোনো সময়, এমনকি বন্ধের দিনেও) আবেদন করতে পেরেছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএর ওপর ৩০ নম্বর কমিয়ে ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের এবং বাকি ২০ নম্বর থাকবে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় অ শ ন আসন র ব পর ত শ ক ষ বর ষ পর ক ষ র অন ষ ঠ ত প রস ত ত ইউন ট র র ভর ত বর ষ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা