গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়কে বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, এ দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বারবার পর্যদুস্ত হয়ে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসনে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে বিভিন্নভাবে সে বিজয়কে ভূলন্ঠিত করা হয়েছে। 

শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড.

বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনকে পরাভূত করে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে দাবি করে দলটির উদ্দেশে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিনের যে ফ্যাসিবাদী শাসন জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের বুকের উপর বসে ছিল, তার বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে লড়াই, অকুতোভয় সংগ্রাম এবং আপনাদের সাথীদের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সে শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছেন। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন যা বাংলাদেশকে রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর করেছে। তিনি বলেন, এখন সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও এ দেশে ফিরে না আসে, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্থায়ী রূপ নেয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সব রকমের নিপীড়ন যেন আমরা প্রতিহত করতে পারি। 

আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন ও নাহিদা সারোয়ার নিভা। 

উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। ২৩ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টি কমিশন বরাবর তাদের মতামত জমা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন। দিনব্যাপী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণতন ত র আল র য় জ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে

সংস্কার প্রশ্নে বাড়াবাড়িতে না গিয়ে দ্রুত নির্বাচনমুখী কর্মসূচির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে শিগগিরই নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন এবং প্রার্থী বাছাইয়ের দিকেও মনোযোগ দেবে দলটি।

গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা, জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে এর প্রতিক্রিয়ায় কী হতে পারে, অথবা সরকারের দিক থেকে অমীমাংসিত সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হলে এর পরিণতিতে কী হতে পারে—এসব বিষয়ে নেতারা আলোচনা করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সভায় অংশ নেন। তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

ওই সূত্র বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির দিক থেকে যে অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে, এর বাইরে আর তেমন কিছু করার নেই। এখন বিএনপির অপেক্ষায় থাকাই ভালো যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বা সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি বিএনপির উচিত হবে এ নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়িতে না গিয়ে দ্রুত নির্বাচনমুখী কর্মসূচির দিকেই যাওয়া—যাতে অন্য শক্তি নির্বাচনমুখী পরিবেশ সৃষ্টির পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকব। সংস্কারের ব্যাপারে সরকার যা খুশি করুক, ভবিষ্যতে যাতে এটা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ না হয়, সেটাই বিএনপির চাওয়া।’

এর আগে স্থায়ী কমিটির একটি সভায় সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনের ঢেউ সৃষ্টি এবং মানুষকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে মাঠের কর্মসূচি শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলটির নেতারা। কিন্তু সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার সমাপ্তি না হওয়ায় বিএনপি মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি মনে করে, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই দলগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সে কারণে বিএনপিরও কর্মসূচি শুরু করা উচিত বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

অবশ্য জামায়াতসহ কয়েকটি দলের কর্মসূচির বিষয়ে সোমবার রাতে প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি ঘোষণা স্ববিরোধিতা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে।

সোমবার স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপির নেতারা বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলের বিপরীতে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া উঠে গেলে বিরোধীদের সব চক্রান্ত এবং অযৌক্তিক দাবি হারিয়ে যাবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি একাধিকবার এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং দেশবাসীকে দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করেছেন। সে অনুযায়ী নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটের হাওয়া তৈরি করার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির বিষয়েও নেতারা স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করেন। ইশতেহার তৈরির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ-বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সভায় জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নীতিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। সেটি তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকেও বলেছিল।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে জনপ্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নমুখী ইশতেহার হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ