সলেমানের সোলার পাম্পে উপকৃত ১১০০ কৃষক, সাশ্রয় একরে ৪০০০ টাকা
Published: 19th, April 2025 GMT
কৃষির উপকরণ হচ্ছে বীজ, সেচ ও সার। তার মধ্যে অন্যতম উপকরণ সেচ। দেশের সেচ ব্যবস্থা ডিজেল ও বিদ্যুৎ নির্ভর। কিন্তু এই দুই ব্যবস্থার থেকে কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব সোলার প্যানেল দিয়ে তৈরি করা সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ে ১১০০ বোরো ধান চাষি। এতে কৃষকের একরপ্রতি সাশ্রয় হচ্চে ৪ হাজার টাকা। শুধু টাকায় নয়, সোলার সেচ পাম্পে নেই কোনো শব্দ, নেই জ্বালানি খরচসহ কোনো রকম ঝামেলা। আর এটি সম্ভব করেছেন সলেমান আলী নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা।
সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের মো.
বর্তমানে তার তৈরি করা সোলার সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ১১০০ কৃষক। এতে এবার প্রায় ৮ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন সলেমান আলী। গত বছর আয় করেছিলেন ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। একেকটি সোলার প্যানেলসহ পাম্প তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বলে জানান সোলার সেচ পাম্প উদ্ভাবনকারী উদ্যোক্তা সলেমান আলী।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ কৃষকের
কৃষি জমিতে ‘বোমা বিস্ফোণ’, কৃষক আহত
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, শ্যালোমেশিন ও বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে সেচ দিতে অনেক বেশি খরচ হয় ও প্রয়োজনের সময় বিদ্যুৎও থাকে না। শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে একর প্রতি খরচ ১০ হাজার আর সোলারে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। এতে খরচ কম ও ঝামেলামুক্ত। এছাড়াও মাটির অভ্যন্তরীণ পাইপ স্থাপন করায় ড্রেনের ঝামেলা নেই এবং ড্রেনের সেই জায়গায় তারা আবাদ করতে পারছেন। এতে ফসল ভালো ও বেশি হচ্ছে। সলেমানের সোলার সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হচ্ছেন তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লালাপুর শুকানি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘‘আমি সলেমান আলীর সোলার সেচ পাম্প দিয়ে গত চার বছর ধরে ফসলে পানি নেই। এতে বিশেষ করে মানুষ থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না। আর শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি নিলে তেল কিনতে হয় ও মেশিন আনা নেওয়া করতে কমপক্ষে দুইজন মানুষ লাগে ও পরিশ্রম হয় বেশি। আর আগে একর প্রতি মেশিনের পানি নিতে বর্তমানে লাগে ১০ হাজার টাকা। আর সোলার সেচ দিতে লাগে ৬ হাজার টাকা। এতে আমাদের অনেক খরচ ও পরিশ্রম কম হয়।’’
একই উপজেলার কালমেঘ বাজার এলাকার কৃষক মো. নূর ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের এইদিকে সোলার পাম্প দেওয়ার পর থেকে কৃষকদের খুবই উপকার হয়েছে। আগে ডিজেলচালিত মেশিনের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে কষ্ট হতো ও খরচ বেশি হতো। সলেমান ভাই সোলার নিয়ে আসাতে আমরা খুব সহজেই বোরো ধান ক্ষেতে পানি দিতে পারছি। পানি দিতে আমাদের ক্ষেতে আসতেও হয় না। শুধু সকালে সোলার পাম্প একবার চালু করে দিলে সারা দিন এমনিতে পানি হয়ে যায়। আর বিকাল ৫-৬টার দিকে সেটি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।’’
সদর উপজেলার মোলানি গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোলারের মাধ্যমে এক ঘণ্টায় বোরো ধানের এক বিঘা জমিতে পানি হয়ে যায়। শ্যালোমেশিন ও ডিপ-টিউবওয়েলের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে ড্রেন করতে হতো। এতে পানির চাপে অনেক সময় মাটির ড্রেন ভেঙে যেত। এখন সলেমান চাচা মাটির নিচ দিয়ে পাইপ পুতে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের আর ড্রেন করতে হয় না ও ড্রেনের যে জায়গাটি পড়ে থাকতো সেটিতে ধান করতে পারছি। এতে আমাদের ধানের ফলনও বেশি হচ্ছে।’’
আরো অনেক কৃষক সলেমানের মাধ্যমে উপকৃত হতে পেরে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সলেমান আলী জানান, তিনি তার বাড়িতে লাইট, ফ্যান, টিভি, ফ্রিজসহ মাছের ও মুরগির খামারে বিদ্যুতের যাবতীয় কাজ সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালান। তার এই প্রযুক্তি দেশে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। তাহলে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয়, পরিবেশ দুষণ রোধ ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, সলেমান আলীর এই উদ্ভাবন কৃষিক্ষেত্রে আর্শীবাদ স্বরূপ। শুধু এই জেলায় নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাসহ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে তার এই উদ্ভাবন প্রযুক্তি। সোলার সেচ পাম্প দিয়ে জেলার প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছেন। তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানকার কৃষকরা সাশ্রয় মূল্যে, প্রয়োজন ও সাধ্যমতো সেচ দিতে পেরে লাভবান হচ্ছেন। ফলে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে।
সলেমানের এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন এবং কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে জানান উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম।
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ব যবস থ আম দ র ইসল ম উপক ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ ফিউশন খাবার উপস্থাপনা
মানজু রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমধর্মী খাবার আয়োজন, যেখানে দেশি স্বাদের সাথে ছিল আন্তর্জাতিক রান্নার কৌশল ও উপকরণ। আয়োজনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা একসূত্রে গাঁথা হয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রন্ধনশিল্পী ইনারা জামাল, যিনি ফুড স্টাডিজে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর এবং ইনস্টিটিউট অব কালিনারি এডুকেশন, নিউইয়র্ক থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
ইনারা জামাল বলেন, ‘খাবার শুধু স্বাদের বিষয় নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। আমি চাই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারকে ভিন্ন দেশের উপকরণ ও কৌশলের সঙ্গে মিশিয়ে বিশ্বদরবারে নতুন রূপে উপস্থাপন করতে। সৃজনশীল উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশি খাবারকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। একইসঙ্গে, তার লক্ষ্য বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে গবেষণার আলোয় তুলে ধরা, যেন এই সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকে। খাবারে তিনি সবসময় প্রাধান্য দেন প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান এবং টেকসই উপস্থাপনাকে।
এই আয়োজনকে আরও রঙিন করে তোলে রন্ধনশিল্পী মালিহার বাহারি পরিবেশনা, যেখানে দেশি উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয় নানান স্বাদের সুস্বাদু খাবার।
আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশি খাদ্যসংস্কৃতিকে আধুনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা এবং ভোজনরসিকদের সামনে এক নতুন স্বাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও পরিবেশনায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। এমন আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দেন।