Samakal:
2025-11-02@00:30:39 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

Published: 19th, April 2025 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দিনমজুর বিল্লাল হোসেন (৫৫)। শরীরে রক্তস্বল্পতার কারণে চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন বাড়তি রক্ত দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আনা হয় ভুল গ্রুপের রক্ত। সেই রক্তই শরীরে সঞ্চালন করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাঁর। বিষয়টি বুঝতে পেরে নার্সরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান বিল্লাল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় বিল্লালের। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামে। পেশায় মাটিকাটার এই শ্রমিক মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুধবার। স্বজন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে বিল্লালের জন্য রক্ত সরবরাহ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসকের পরামর্শে নার্সরা সেই রক্ত সঞ্চালন করেন। বিল্লাল হোসেনের রক্ত ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের হলেও তাঁর শরীরে পুশ করা হয় ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। কিছু রক্ত শরীরে যাওয়ার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।
মেয়ে সেলিনা আক্তারের অভিযোগ, তাঁর বাবার শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারার পরপরই চিকিৎসক-নার্সদের ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তারা কেউই এগিয়ে আসেননি। উল্টো নার্সেরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে অন্য এক চিকিৎসক এসে রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেলেই তাঁর বাবা মারা যান। 

এ ঘটনায় বিল্লালের ক্ষুব্ধ স্বজন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিন রাত ৮টার দিকে দায়িত্ব শুরু হয়েছিল চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদের। তাঁর ভাষ্য, বিকেল ৪টার দিকে রক্ত পুশ করার সময় দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার নূর জাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী। তিনি দায়িত্ব শুরুর পর সাধ্যমতো রোগীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরও বাঁচানো যায়নি।
বিল্লালের স্বজনের ভাষ্য, তাঁর শরীরে এক চতুর্থাংশ রক্ত যাওয়ার পর ব্যাগ খুলে ফেলা হয়েছিল। একই রকম মন্তব্য করেন চিকিৎসক ইশতিয়াক। তিনি দাবি করেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে এভাবে রক্ত দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি মারাত্মক ভুল। 
এদিকে বিল্লালের মৃত্যুসনদে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে ডা.

ইশতিয়াক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি কেন এতে লেখা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই এটি লেখা হয়নি।

২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি লাশ
বিল্লাল হোসেনের নাতনি জামাই সিজান মিয়ার ভাষ্য, তাঁর নানাশ্বশুর মারা গেছেন শুক্রবার রাত ১০টার দিকে। শনিবার সারাদিন তারা লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। কখন ময়নাতদন্ত হবে, বারবার জানতে চাইলেও কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর পুলিশ জানায়, রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দেওয়া হবে। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ জানায়, রাতে ময়নাতদন্ত হবে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বহুদিন আগে বিল্লালের একমাত্র ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর থেকে তাঁর দেখাশোনা করেন চার মেয়ে। বিল্লালের জামাতা হাসানের ভাষ্য, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য তারা মানিকগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে দেওয়া হয়। সারাদিনেও ময়নাতদন্ত হয়নি। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ সেখানে অপেক্ষা করে চলে এসেছে।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে এসব অভিযোগ জানতে চিকিৎসক নূর জাহার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ওই ব্যক্তির স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি। সন্ধ্যার পর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য চিকিৎসক ছিলেন না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ন চ ক ৎসক ময়ন তদন ত শ ক রব র র জন য হয় ছ ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ