Samakal:
2025-05-01@05:39:54 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

Published: 19th, April 2025 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দিনমজুর বিল্লাল হোসেন (৫৫)। শরীরে রক্তস্বল্পতার কারণে চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন বাড়তি রক্ত দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আনা হয় ভুল গ্রুপের রক্ত। সেই রক্তই শরীরে সঞ্চালন করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাঁর। বিষয়টি বুঝতে পেরে নার্সরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান বিল্লাল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় বিল্লালের। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামে। পেশায় মাটিকাটার এই শ্রমিক মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুধবার। স্বজন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে বিল্লালের জন্য রক্ত সরবরাহ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসকের পরামর্শে নার্সরা সেই রক্ত সঞ্চালন করেন। বিল্লাল হোসেনের রক্ত ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের হলেও তাঁর শরীরে পুশ করা হয় ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। কিছু রক্ত শরীরে যাওয়ার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।
মেয়ে সেলিনা আক্তারের অভিযোগ, তাঁর বাবার শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারার পরপরই চিকিৎসক-নার্সদের ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তারা কেউই এগিয়ে আসেননি। উল্টো নার্সেরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে অন্য এক চিকিৎসক এসে রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেলেই তাঁর বাবা মারা যান। 

এ ঘটনায় বিল্লালের ক্ষুব্ধ স্বজন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিন রাত ৮টার দিকে দায়িত্ব শুরু হয়েছিল চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদের। তাঁর ভাষ্য, বিকেল ৪টার দিকে রক্ত পুশ করার সময় দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার নূর জাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী। তিনি দায়িত্ব শুরুর পর সাধ্যমতো রোগীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরও বাঁচানো যায়নি।
বিল্লালের স্বজনের ভাষ্য, তাঁর শরীরে এক চতুর্থাংশ রক্ত যাওয়ার পর ব্যাগ খুলে ফেলা হয়েছিল। একই রকম মন্তব্য করেন চিকিৎসক ইশতিয়াক। তিনি দাবি করেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে এভাবে রক্ত দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি মারাত্মক ভুল। 
এদিকে বিল্লালের মৃত্যুসনদে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে ডা.

ইশতিয়াক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি কেন এতে লেখা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই এটি লেখা হয়নি।

২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি লাশ
বিল্লাল হোসেনের নাতনি জামাই সিজান মিয়ার ভাষ্য, তাঁর নানাশ্বশুর মারা গেছেন শুক্রবার রাত ১০টার দিকে। শনিবার সারাদিন তারা লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। কখন ময়নাতদন্ত হবে, বারবার জানতে চাইলেও কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর পুলিশ জানায়, রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দেওয়া হবে। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ জানায়, রাতে ময়নাতদন্ত হবে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বহুদিন আগে বিল্লালের একমাত্র ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর থেকে তাঁর দেখাশোনা করেন চার মেয়ে। বিল্লালের জামাতা হাসানের ভাষ্য, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য তারা মানিকগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে দেওয়া হয়। সারাদিনেও ময়নাতদন্ত হয়নি। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ সেখানে অপেক্ষা করে চলে এসেছে।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে এসব অভিযোগ জানতে চিকিৎসক নূর জাহার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ওই ব্যক্তির স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি। সন্ধ্যার পর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য চিকিৎসক ছিলেন না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ন চ ক ৎসক ময়ন তদন ত শ ক রব র র জন য হয় ছ ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

সিনিয়র স্টাফ নার্সের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি প্রকাশ

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ১০ম গ্রেডের ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স’ পদের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। মৌখিক পরীক্ষা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ভবনে (আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা) অনুষ্ঠিত হবে। মৌখিক পরীক্ষা ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে ২২ মে’তে। বিভিন্ন কারণে যাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, সেই তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।  আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) পিএসসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

সিনিয়র স্টাফ নার্সের সংশোধিত সূচি.pdfডাউনলোডআরও পড়ুনবিসিএসে নতুন সিলেবাস, ভারত–শ্রীলঙ্কা–সিঙ্গাপুরের চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে কাজ করছে পিএসসি১০ ঘণ্টা আগে

মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে প্রার্থীদের করণীয় সম্পর্কেও জানিয়েছে পিএসসি। এগুলোর মধ্য অন্যতম—

শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল মূল/সাময়িক সনদ, প্রবেশপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ এবং চাকরিরত প্রার্থীকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিল স্বাক্ষরিত ছাড়পত্রের মূল কপি দাখিল করতে হবে, উল্লিখিত সনদ/কাগজপত্রের মূল কপি ছাড়া মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না।

মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মূল আবেদনপত্র অর্থাৎ BPSC Form 5A ( Applicant's Copy) কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিম্নোক্ত কাগজপত্র/তথ্যাদির ০১ সেট মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে জমা দিতে হবে : ক. পরীক্ষার প্রবেশপত্র ২ (দুই) কপি; খ. BPSC Form 5A (Applicant's Copy) ০২ (দুই) কপি; গ. সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল/সাময়িক সনদের সত্যায়িত ফটোকপি প্রভৃতি।

মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি দেখুন এখানে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলিম পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণ ৫ দিন
  • জয়পুরহাটে পুকুর নিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের দ্বন্দ্ব
  • সিনিয়র স্টাফ নার্সের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি প্রকাশ