Samakal:
2025-07-31@19:44:30 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

Published: 19th, April 2025 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দিনমজুর বিল্লাল হোসেন (৫৫)। শরীরে রক্তস্বল্পতার কারণে চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন বাড়তি রক্ত দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আনা হয় ভুল গ্রুপের রক্ত। সেই রক্তই শরীরে সঞ্চালন করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাঁর। বিষয়টি বুঝতে পেরে নার্সরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান বিল্লাল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় বিল্লালের। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামে। পেশায় মাটিকাটার এই শ্রমিক মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুধবার। স্বজন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে বিল্লালের জন্য রক্ত সরবরাহ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসকের পরামর্শে নার্সরা সেই রক্ত সঞ্চালন করেন। বিল্লাল হোসেনের রক্ত ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের হলেও তাঁর শরীরে পুশ করা হয় ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। কিছু রক্ত শরীরে যাওয়ার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।
মেয়ে সেলিনা আক্তারের অভিযোগ, তাঁর বাবার শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারার পরপরই চিকিৎসক-নার্সদের ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তারা কেউই এগিয়ে আসেননি। উল্টো নার্সেরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে অন্য এক চিকিৎসক এসে রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেলেই তাঁর বাবা মারা যান। 

এ ঘটনায় বিল্লালের ক্ষুব্ধ স্বজন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিন রাত ৮টার দিকে দায়িত্ব শুরু হয়েছিল চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদের। তাঁর ভাষ্য, বিকেল ৪টার দিকে রক্ত পুশ করার সময় দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার নূর জাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী। তিনি দায়িত্ব শুরুর পর সাধ্যমতো রোগীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরও বাঁচানো যায়নি।
বিল্লালের স্বজনের ভাষ্য, তাঁর শরীরে এক চতুর্থাংশ রক্ত যাওয়ার পর ব্যাগ খুলে ফেলা হয়েছিল। একই রকম মন্তব্য করেন চিকিৎসক ইশতিয়াক। তিনি দাবি করেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে এভাবে রক্ত দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি মারাত্মক ভুল। 
এদিকে বিল্লালের মৃত্যুসনদে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে ডা.

ইশতিয়াক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি কেন এতে লেখা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই এটি লেখা হয়নি।

২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি লাশ
বিল্লাল হোসেনের নাতনি জামাই সিজান মিয়ার ভাষ্য, তাঁর নানাশ্বশুর মারা গেছেন শুক্রবার রাত ১০টার দিকে। শনিবার সারাদিন তারা লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। কখন ময়নাতদন্ত হবে, বারবার জানতে চাইলেও কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর পুলিশ জানায়, রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দেওয়া হবে। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ জানায়, রাতে ময়নাতদন্ত হবে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বহুদিন আগে বিল্লালের একমাত্র ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর থেকে তাঁর দেখাশোনা করেন চার মেয়ে। বিল্লালের জামাতা হাসানের ভাষ্য, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য তারা মানিকগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে দেওয়া হয়। সারাদিনেও ময়নাতদন্ত হয়নি। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ সেখানে অপেক্ষা করে চলে এসেছে।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে এসব অভিযোগ জানতে চিকিৎসক নূর জাহার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ওই ব্যক্তির স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি। সন্ধ্যার পর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য চিকিৎসক ছিলেন না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ন চ ক ৎসক ময়ন তদন ত শ ক রব র র জন য হয় ছ ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • মৎস্য অধিদপ্তরের দশম গ্রেডের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ