সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার বিষয়ে সংবিধান সংষ্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এর পরিবর্তে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় থাকা ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’ এই মূলনীতির প্রত্যাবর্তন চেয়েছে দলটি। একই সঙ্গে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের অভিন্ন পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ইসলামী এই সংগঠনটি। দ্রুত এই প্রস্তাবগুলোর বাতিল চেয়েছে তারা । দাবি আদায়ে আগামী ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

রোববার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ৩ মে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। রোববার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ্ মুহিদুল্লাহ বাবুনগরী।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তাদের দাবিগুলো তুলে ধরনে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের গণগত্যা এবং ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর বাংলাদেশ আগমনের বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনে হামলা ও হত্যার বিচার করতে হবে।সংবিদান সষ্কার কমিশনের প্রস্তাবিত বহুত্ববাদক প্রত্যাখান করছে হেফাজতে ইসলাম। এই প্রস্তাব বাতিল করে সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বা’- এই মূলনীতি পুনর্বহাল করতে হবে।

মামুনুল হক আরও বলেন, নারী সংষ্কার কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মী বিধানের বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামী পারিবারিক আইনকে বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম এই প্রস্তাবনাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে। ‘ইসলাম কটাক্ষকারী’ এই প্রস্তাবনা, প্রস্তাবকারী কমিশন (নারী সংষ্কার কমিশন) এবং প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রস্তাব বাস্তবায়নের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ৩ মের মধ্যে সংষ্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাবগুলো বাতিল করা না হলে মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান যুগ্ম-মহাসচিব।

তিনি আরও বলের, হেফাজতে ইসলামের আরও দাবির মধ্যে রয়েছে- ভারতীয় ওয়াকফ আইন সংশোধন ও এটিকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ওপর হামলা বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গণহত্যা বন্ধ করে ফিলিস্তিন দখলদার মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

মহাসমাবেশ সফল করতে আগামী মঙ্গলবার থেকে ১ সপ্তাহ গণসংযোগ ও আগামী ২৫ এপ্রিল বাদ জুমা প্রতি জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রতিবেদন আকারে জমা দেয় সংবিধান সংস্কার কমিশন। বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলোর পরিবর্তে নতুন মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র'র কথা সুপারিশ করা হয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।

হেফজতের মতো বিএনপিও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নেই। ছিল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’।

এদিকে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। এতে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে। যার বিরোধীতা করেঝে হেফাজতে ইসলাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ইসল ম র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ