লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমন মিয়া। স্থানীয় একটি দোকানের এই কর্মীর সংসার স্ত্রী ও তিন মাসের সন্তান নিয়ে। প্রতি দিন সকালে পানির জন্য ঘর থেকে বের হতে হয় তাঁর স্ত্রী শিউলি বেগমকে। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই দম্পতির মতো পানি সংকটে ভুগছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
গতকাল সোমবার রায়পুর পৌর এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। তারা জানান, কলে পানি নেই, কিন্তু বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে গোসলও করতে পারছেন না অনেকে। এসব নিয়ে সংসারেও দেখা দিয়েছে অশান্তি। সরকারি চাকুরে ইউছুফ মিয়াকে পৌর এলাকার বাসা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয় নিয়মিত। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই ফিরে গোসলের পানি পান না। তাঁর স্ত্রী-সন্তানরাও নিয়মিত গোসল করতে পারছে না। 
একই দুর্দশার মধ্যে পড়েছে শত শত পরিবার। ওয়াপদা কলোনির বাসিন্দা দিলীপ কুমার পাল রায়পুর সরকারি কলেজের প্রাক্তন প্রভাষক। তিনি বলেন, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পাশের ডাকাতিয়া নদীর পানিতে কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কয়েক দিন ধরে পরিবারের তিন সদস্য গোসল করতে পারছেন না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে ৯ দশমিক শূন্য ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রায়পুর পৌরসভার যাত্রা শুরু। প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা ৩০ লাখ লিটার। অথচ সরবরাহ হচ্ছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। ২০০১ সালে ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (ড্যানিডা) একটি প্রকল্পের আওতায় শোধনাগার নির্মাণ শুরু হয়। এর ধারণক্ষমতা ৭ লাখ লিটার। ২০২৪ সালে মাত্র ২০০ গ্রাহকের মধ্যে সরবরাহ দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালে নতুনবাজারে একটি ৫ লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শোধনাগার নির্মিত হয়। দুটিতে প্রায় ২ হাজার ৬০০ গ্রাহক। সব মিলিয়ে দিনে ১২ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। 
গ্রাহকদের অভিযোগ, কোথাও দিনে মাত্র এক ঘণ্টা, কোথাও আবার একদিন পরপর পানি মিলছে। যা মিলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। রান্নাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছেন তারা। তাদের ভাষ্য, মাস শেষে ঠিকই ৩৫০ টাকা বিল দেন, কিন্তু পানি পান না ঠিকমতো। এই যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। 
ব্যবসায়ী আহসানুল্লাহ বলেন, ‘প্রতি মাসে আগে ৩০০ টাকা দিয়েছি। এখন বাড়তি ৫০ টাকা নিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পানির বিল দিচ্ছি, অথচ পানি পাচ্ছি না। ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজিম উদ্দিনের প্রতিদিনের দুশ্চিন্তা, বাসায় পানি আছে তো! তাঁর মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে পানির জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে। এটা ভাবতেও কষ্ট হয়। বছরখানেক আগে দুবাই থেকে ফেরা ইয়াকুব আলীও ভাবেননি দেশে ফিরে এমন অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘পানি ছাড়া জীবন চলে?’
মধ্যবাজার এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সুমনের স্ত্রী শিউলি বেগমকে ছোট্ট সন্তান রেখে ভোরে পানির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কখনও পানি পান, কখনও পান না। এ কারণে রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়াসহ সবকিছুতেই ভোগান্তি হচ্ছে। দুই সন্তানের মা তানিয়া বেগম থাকেন রায়পুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সোমবার আধা কিলোমিটার দূরে গিয়েও পানি পাননি। খালি হাতে ফেরার সময় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
দিনের পর দিন এমন দুর্ভোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী রহিম সরদার। তিনি বলেন, ‘মাস শেষে ঠিকই ৩৫০ টাকা বিল দেই। কিন্তু এক ঘণ্টাও পানি পাই না। রান্না, গোসল– কোনো 
কিছুই করতে পারি না। পাইপলাইনের সংযোগ নিয়েছি, কিন্তু ওয়াসার কল শুকনো পড়ে থাকে। এক ফোঁটা পানিও আসে না। এই কষ্ট আর সহ্য হয় না।’
রায়পুরের ইউএনও মো.

ইমরান খান পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বেও আছেন। তাঁর ভাষ্য, মূল পাইপলাইনের সঙ্গে অবৈধভাবে পাম্পের সংযোগ দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। এ কারণে দূরের গ্রাহকরা পানি পাচ্ছেন না। এ ছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। চারটি পাম্পের মধ্যে একটি নষ্ট। তাই সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্রাহকের এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রসভ র সরবর হ র এল ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।

মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।

সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়ন

টিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।

উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।

বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান

অবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’

জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।

চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’  

হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে