সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তিনজন বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়ে মত দিয়েছে বিএনপি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বেলা ১১টার পর এই আলোচনা শুরু হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোটের বিষয়ে বিএনপি একমত পোষণ করেছে। ন‍্যায়পাল নিয়োগের বিষয়েও একমত হয়েছে বিএনপি। তবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তিনজন বিচারপতির মধ‍্য থেকে একজনকে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা করা যেতে পারে বলে তাঁরা মতামত দিয়েছেন।

সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি একমত—এ কথা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধানের অষ্টম, নবম, দশম, দ্বাদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থার কথা বলেছেন তাঁরা। ধর্মনিরপেক্ষতা বিলুপ্ত করার সঙ্গে বিএনপি একমত। সাম‍্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার আনার ক্ষেত্রেও তাঁরা একমত। এগুলো মৌলিক অধিকারে আনার কথা বলেছে বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা তাঁদের অঙ্গীকার। এক ব্যক্তির পরপর দুই মেয়াদের পর একবার বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখার কথা তাঁরা বলেছেন। একই ব্যক্তি সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হবেন না, এটার সঙ্গে বিএনপি একমত হয়নি।

আরও পড়ুনবিএনপি বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আজ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষের আশা২ ঘণ্টা আগে

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংসদ নেতার পদ থাকা উচিত। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত যে, দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হবেন কি না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব‍্যবহার করা যাবে না, এ বিষয়ে তাঁরা একমত। স্থানীয় প্রশাসনে যে চারটি বিভাগের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা একমত।

সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, পার্লামেন্ট হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন থাকবে, এর মধ্যে নারীদের জন্য ১০০ আসন রাখা এবং উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের সুপারিশ বিষয়ে বিএনপি একমত।

আজকের আলোচনায় সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফার বৈঠক শুরু৩ ঘণ্টা আগে

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুনএকজন কতবার প্রধানমন্ত্রী, আলোচনায় নতুন প্রস্তাব২০ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ন ব চ রপত ব এনপ র সদস য রপত র

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। আজকের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন ।

আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।

আজকের আলোচনায়—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের সাংবিধানিক বিধান এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আজ নতুন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দুই বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ‘র‍্যাঙ্ক-চয়েস’ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।

এই র‍্যাঙ্ক-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।

নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তবে আজকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। আগামীকাল কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। আশা করছি তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছিল, তার একটি তালিকা আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর আগামীকালই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।

জুলাই সনদের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির