বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত
Published: 22nd, April 2025 GMT
কুমিল্লায় বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ-কোটবাড়ী সড়কে রামমালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন তাঁর বড় ভাইও।
নিহত তরুণের নাম ইমন সরকার (২২)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাসিন্দা। তবে কুমিল্লা কোটবাড়ীতে বড় ভাই সুমন সরকারের ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। স্বজনেরা জানান, গতকালই একটি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন ইমন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কুমিল্লা নগরের রামমালা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে সুমনের সঙ্গে টমছমব্রিজের দিকে যাচ্ছিলেন ইমন। রামমালা পানির ট্যাংক মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এতে ছিটকে সড়কে পড়েন ইমন। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সুমন আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপর উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কাভার্ড ভ্যানটিকে জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন।
হতাহত ব্যক্তিদের খালাতো ভাই ফাহাদ সরকার জানান, ইমন এইচএসসির পর আর পড়াশোনা করেননি। তাঁর বড় ভাই সুমনের সঙ্গে গতকাল থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। সেই কাজেই আজ দুই ভাই একসঙ্গে বের হন।
ইমনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।