দেশেই তৈরি হচ্ছে জাপানের মিতসুবিশি ও মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের গাড়ি। এসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর গ্রামে র‌্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা শিল্প পার্কে অবস্থিত র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায়।  

এত দিন এই কারখানায় কেবল বিদেশ থেকে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হতো। এখন গাড়ির মূলকাঠামো ও অন্যান্য অংশ রং করা, সেগুলো সংযোজন ও বাজারে ছাড়ার আগে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। এসব কাজের জন্য এক বছর ধরে কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের স্থানীয় উৎপাদন দেশে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাশ্রয়ী দামে গাড়ি বিক্রিতে সহায়ক হবে।

গতকাল মঙ্গলবার কাশিমপুরে র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাসহ র‌্যানকন শিল্পপার্ক সরেজমিনে দেখেন একদল সাংবাদিক। এ সময় র‌্যানকন কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গাড়ি উৎপাদনের নানা ধাপ ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানান। প্রায় ৫৭ একর জায়গায় অবস্থিত এই শিল্পপার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজনের কারখানা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—র‌্যানকন মোটরবাইক, র‌্যানকন ইলেকট্রনিকস ও র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত র‌্যানকন মোটরবাইকের কারখানায় জাপানের সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন করা হয়, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত র‌্যানকন ইলেকট্রনিকসের কারখানায় তোশিবা, এলজি, স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশন ও ফ্রিজ তৈরি এবং সংযোজন করা হয়। আর র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় তৈরি হয় ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি। এই শিল্পপার্কের তিন কারখানায় বর্তমানে আট শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।

যেসব গাড়ি উৎপাদিত হয়

র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শিহাব আহমেদ জানান, ২০১৭ সালে জাপানের মিতসুবিশির আউটল্যান্ডার মডেলের গাড়ি সংযোজনের মধ্য দিয়ে র‌্যানকন অটোর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৯৮ হাজার বর্গফুটের এ কারখানায় চার ধরনের গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে মিতসুবিশির এক্সপ্যান্ডার মডেল ও প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলের ব্যক্তিগত সংযোজন ও গাড়ি রং করা হয়। এ ছাড়া চীনের জ্যাক পিকআপ ট্রাক ও জার্মান প্রযুক্তিতে মার্সিডিজ–বেঞ্জের বাস সংযোজন করা হয়।  

সরেজমিনে দেখা যায়, মিতসুবিশি ও প্রোটন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর মূলকাঠামো আমদানি করা হয়। এরপর ওই কাঠামোতে রং করা, গাড়ির অন্যান্য অংশ রং করাসহ সেগুলো সংযোজনের সব কাজ করা হচ্ছে। র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা জানান, দেশে একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের টেস্টট্র্যাক রয়েছে এ কারখানায়। যার মাধ্যমে গাড়ির গতি, ব্রেক, হ্যান্ডলিং, স্থিতিশীলতা, সাসপেনশন ও অন্যান্য কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। কর্মকর্তারা আরও জানান, ভবিষ্যতে এ কারখানায় এমজি গাড়িও সংযোজন করা হবে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এ কারখানায় চার ধরনের ব্যক্তিগত (প্যাসেঞ্জার) গাড়ি ও দুই ধরনের বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গাড়ি সংযোজিত হবে বলে জানান তাঁরা।  

র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক মো.

বদিউজ্জামান জানান, বর্তমানে এ কারখানায় বছরে দুই হাজার ইউনিট মিতসুবিশি এক্সপেন্ডার গাড়ি, ৩০০ থেকে ৪০০ ইউনিট প্রোটন এক্স–৭০ গাড়ি, ৬০০ ইউনিট বাণিজ্যিক ট্রাক ও ৩৬০ ইউনিট বাণিজ্যিক মার্সিডিজ বাস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

বাণিজ্যিক বিক্রি শুরু জুনে  

র‌্যানকনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে তাঁদের কারখানায় মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেল ও প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলের ব্যক্তিগত গাড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। আগামী জুনে এ দুটি গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু হবে। দুটি গাড়ির মধ্যে প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলটি পাঁচ আসনের। আর মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেলের গাড়িটি সাত আসনের মাল্টিপারপাস (এমপিভি)। অর্থাৎ পণ্য ও যাত্রী বহনের উপযোগী গাড়ি এটি। দেড় হাজার সিসির এ গাড়িটি শহরের অভ্যন্তরে চালালে প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার চলবে। সব গাড়িতেই থাকবে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি। তবে এসব গাড়ির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

মিতসুবিশির গাড়িটি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা র‌্যানকনের কর্মকর্তাদের। কারণ, হিসেবে তাঁরা বলছেন, এ ধরনের গাড়ি মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে গ্রাহকের শীর্ষ বা দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে।  

র‌্যানকনের অটোমোটিভ বিভাগ–১ এর বিপণনপ্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন বলেন, ‘জাপানি মানের গাড়ি তৈরির সক্ষমতা এখন আমাদের রয়েছে। আমাদের কারখানায় বিশ্বমানের নির্মাণসুবিধা জাপানের মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুমোদিত।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র জ র ক র কর মকর ত কর মকর ত র প র টন র ও প র টন সব গ ড় র এক স ক ত গত ধরন র ইউন ট উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।

তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ