মিতসুবিশি ও প্রোটনের গাড়ি দেশেই তৈরি হচ্ছে
Published: 23rd, April 2025 GMT
দেশেই তৈরি হচ্ছে জাপানের মিতসুবিশি ও মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের গাড়ি। এসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর গ্রামে র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা শিল্প পার্কে অবস্থিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায়।
এত দিন এই কারখানায় কেবল বিদেশ থেকে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হতো। এখন গাড়ির মূলকাঠামো ও অন্যান্য অংশ রং করা, সেগুলো সংযোজন ও বাজারে ছাড়ার আগে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। এসব কাজের জন্য এক বছর ধরে কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের স্থানীয় উৎপাদন দেশে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাশ্রয়ী দামে গাড়ি বিক্রিতে সহায়ক হবে।
গতকাল মঙ্গলবার কাশিমপুরে র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাসহ র্যানকন শিল্পপার্ক সরেজমিনে দেখেন একদল সাংবাদিক। এ সময় র্যানকন কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গাড়ি উৎপাদনের নানা ধাপ ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানান। প্রায় ৫৭ একর জায়গায় অবস্থিত এই শিল্পপার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজনের কারখানা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—র্যানকন মোটরবাইক, র্যানকন ইলেকট্রনিকস ও র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যানকন মোটরবাইকের কারখানায় জাপানের সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন করা হয়, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যানকন ইলেকট্রনিকসের কারখানায় তোশিবা, এলজি, স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশন ও ফ্রিজ তৈরি এবং সংযোজন করা হয়। আর র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় তৈরি হয় ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি। এই শিল্পপার্কের তিন কারখানায় বর্তমানে আট শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
যেসব গাড়ি উৎপাদিত হয়
র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শিহাব আহমেদ জানান, ২০১৭ সালে জাপানের মিতসুবিশির আউটল্যান্ডার মডেলের গাড়ি সংযোজনের মধ্য দিয়ে র্যানকন অটোর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৯৮ হাজার বর্গফুটের এ কারখানায় চার ধরনের গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে মিতসুবিশির এক্সপ্যান্ডার মডেল ও প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলের ব্যক্তিগত সংযোজন ও গাড়ি রং করা হয়। এ ছাড়া চীনের জ্যাক পিকআপ ট্রাক ও জার্মান প্রযুক্তিতে মার্সিডিজ–বেঞ্জের বাস সংযোজন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিতসুবিশি ও প্রোটন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর মূলকাঠামো আমদানি করা হয়। এরপর ওই কাঠামোতে রং করা, গাড়ির অন্যান্য অংশ রং করাসহ সেগুলো সংযোজনের সব কাজ করা হচ্ছে। র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা জানান, দেশে একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের টেস্টট্র্যাক রয়েছে এ কারখানায়। যার মাধ্যমে গাড়ির গতি, ব্রেক, হ্যান্ডলিং, স্থিতিশীলতা, সাসপেনশন ও অন্যান্য কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। কর্মকর্তারা আরও জানান, ভবিষ্যতে এ কারখানায় এমজি গাড়িও সংযোজন করা হবে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এ কারখানায় চার ধরনের ব্যক্তিগত (প্যাসেঞ্জার) গাড়ি ও দুই ধরনের বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গাড়ি সংযোজিত হবে বলে জানান তাঁরা।
র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক মো.
বাণিজ্যিক বিক্রি শুরু জুনে
র্যানকনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে তাঁদের কারখানায় মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেল ও প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলের ব্যক্তিগত গাড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। আগামী জুনে এ দুটি গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু হবে। দুটি গাড়ির মধ্যে প্রোটনের এক্স–৭০ মডেলটি পাঁচ আসনের। আর মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেলের গাড়িটি সাত আসনের মাল্টিপারপাস (এমপিভি)। অর্থাৎ পণ্য ও যাত্রী বহনের উপযোগী গাড়ি এটি। দেড় হাজার সিসির এ গাড়িটি শহরের অভ্যন্তরে চালালে প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার চলবে। সব গাড়িতেই থাকবে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি। তবে এসব গাড়ির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
মিতসুবিশির গাড়িটি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা র্যানকনের কর্মকর্তাদের। কারণ, হিসেবে তাঁরা বলছেন, এ ধরনের গাড়ি মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে গ্রাহকের শীর্ষ বা দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
র্যানকনের অটোমোটিভ বিভাগ–১ এর বিপণনপ্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন বলেন, ‘জাপানি মানের গাড়ি তৈরির সক্ষমতা এখন আমাদের রয়েছে। আমাদের কারখানায় বিশ্বমানের নির্মাণসুবিধা জাপানের মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুমোদিত।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র জ র ক র কর মকর ত কর মকর ত র প র টন র ও প র টন সব গ ড় র এক স ক ত গত ধরন র ইউন ট উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।
গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।