কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার অর্থাৎ টেলিযোগাযোগ সেবায় মধ্যস্বত্বভোগী কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) একটি খসড়া নীতিমালা করেছে, যেখানে টেলিযোগাযোগ সেবার বিভিন্ন স্তরে লাইসেন্সের সংখ্যা কমবে।

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অন্তত ২২ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতাদের কাছে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা টেলিযোগাযোগ–ব্যবস্থায় অন্য লাইসেন্সধারীদের ভূমিকার বিষয়টিও সামনে আনতেন। তাঁরা বলতেন, অন্য লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে ভালো মানের সেবা না পেলে গ্রাহককে উন্নত সেবা দেওয়া কঠিন।

যেমন ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ আসে সাবমেরিন কেব্‌ল ও ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্‌লের (আইটিসি) মাধ্যমে। সেখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) মাধ্যমে মোবাইল অপারেটর ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা ব্যান্ডউইডথ নেয়। ব্যান্ডউইডথ সঞ্চালনের তার বা অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল স্থাপন করে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটররা। মোবাইল অপারেটরদের জন্য টাওয়ার বা বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন বসানোর কাজ করে টাওয়ার কোম্পানি।

অন্তর্বর্তী সরকার টেলিযোগাযোগ খাতে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যার একটি হলো লাইসেন্সের স্তর কমিয়ে আনা। এর অংশ হিসেবে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সেবা নীতিমালা (আইএলডিটিএস) ২০১০–কে সংস্কার করে নতুন একটি খসড়া করেছে। সোমবার রাতে তা কমিশনের ওয়েবসাইটে মতামত প্রদানের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।

কথা বলার ক্ষেত্রে এক মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে অন্য অপারেটরের কল আদান-প্রদান হয় ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ বা আইসিএক্সের মাধ্যমে। অন্যদিকে এক আইএসপি থেকে আরেক আইএসপির ডেটা ট্রাফিক আদান-প্রদান করে নিক্স (ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ)।

টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতারাই টেলিযোগাযোগ–ব্যবস্থার বেশির ভাগ সেবা দিতেন। যেমন টাওয়ার বসানো ও আইসিএক্স পরিচালনার কাজ মোবাইল অপারেটরগুলো নিজেরাই করত। পরে একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙার কথা বলে আলাদা লাইসেন্সিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

মূলত জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা ধরনের লাইসেন্সিং চালু করে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার টেলিযোগাযোগ খাতে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যার একটি হলো লাইসেন্সের স্তর কমিয়ে আনা। এর অংশ হিসেবে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সেবা নীতিমালা (আইএলডিটিএস) ২০১০–কে সংস্কার করে নতুন একটি খসড়া করেছে। সোমবার রাতে তা কমিশনের ওয়েবসাইটে মতামত প্রদানের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।

খসড়ায় আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্স ও নিক্স সেবায় আলাদা লাইসেন্স–ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মানে হলো গ্রাহক পর্যায়ের সেবাদাতারাই টেলিযোগাযোগের মধ্যবর্তী এসব সেবা পরিচালনা করতে পারবেন।

খসড়াটির নাম ‘নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং রেজিম রিফর্ম পলিসি ২০২৫’। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মতামত দেওয়া যাবে।

এই খসড়ায় আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্স ও নিক্স সেবায় আলাদা লাইসেন্স–ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মানে হলো গ্রাহক পর্যায়ের সেবাদাতারাই টেলিযোগাযোগের মধ্যবর্তী এসব সেবা পরিচালনা করতে পারবেন।

বিটিআরসির কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ) এবং এই সংস্কার কমিটির প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ইকবাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় আইএলডিটিএস নীতির সংস্কার করা হচ্ছে। এই খসড়া তৈরিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

বিটিআরসি খসড়ায় ২২ ধরনের লাইন্সেসিং–ব্যবস্থা কমিয়ে তিনটি স্তরে নিয়ে আসার কথা বলছে। যা হলো অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি), ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) এবং ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। এর আওতায় মোট ৪টি লাইসেন্স ও দুই ধরনের তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা থাকবে।

কেন এই সংস্কার

বাংলাদেশে মুঠোফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬৫ লাখ। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৬০ লাখ। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি।

মুঠোফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক না পাওয়া, কথা শুনতে সমস্যা হওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গতি কম ও নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অভিযোগ একই ধরনের। দীর্ঘ সময় ধরেই এসব বিষয় আলোচনায় রয়েছে। পাশাপাশি আবার ইন্টারনেটের দাম কমানোর দাবি রয়েছে।

বিটিআরসি এমন পরিস্থিতিতে আইএলডিটিএস নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নিল। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিটিআরসি নীতিমালার খসড়ায় বলেছে, আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ও ভয়েস আন্তসংযোগের জন্য কাঠামোগতভাবে আলাদাকরণের কোনো যুক্তি নেই। এ ধরনের আলাদা আন্তসংযোগ খরচ বৃদ্ধি করে এবং মান খারাপ হয়।

বাস্তবতা বিবেচনায় আইএলডিটিএস নীতির সংস্কার করা হচ্ছে। এই খসড়া তৈরিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা হবে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইকবাল আহমেদ, বিটিআরসির কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ) এবং এই সংস্কার কমিটির প্রধান

বিটিআরসি খসড়ায় ২২ ধরনের লাইন্সেসিং–ব্যবস্থা কমিয়ে তিনটি স্তরে নিয়ে আসার কথা বলছে। যা হলো অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি), ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) এবং ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। এর আওতায় মোট ৪টি লাইসেন্স ও দুই ধরনের তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা থাকবে।

এএনএসপি ব্যবস্থায় সেলুলার মোবাইল সেবা ও ফিক্সড টেলিকম (তারযুক্ত) সেবা আলাদা লাইসেন্স নেবে। তারা গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ দেবে। ফাইবার নেওয়া এবং টাওয়ারের সেবা তারা এনআইসিএসপি থেকে নেবে। সব ধরনের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্যও আইসিএসপির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ভয়েস এবং ডেটা ট্রাফিক প্রবাহের ক্ষেত্রে এএনএসপিরা নিজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে অথবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক আন্তসংযোগের ব্যবস্থা রাখবে। এই ব্যবস্থায় এএনএসপিরা ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিংয়ে’ (অবকাঠামো ভাগাভাগি) যেতে পারবে। তবে তরঙ্গ ভাগাভাগি করার জন্য বিটিআরসির অনুমতি নিতে হবে।

বিটিআরসি এখন যে খসড়া করেছে, তা বৈশ্বিক মানের। দেশে অনেক লাইসেন্স, যার ব্যবস্থাপনাও কঠিন। টেলিযোগাযোগ খাতে বিশ্বায়নের দিক থেকে ভালো সেবার জন্য একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। পাশাপাশি সরকারের ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।রকিবুল হাসান, বিটিআরসি সাবেক পরিচালক এবং লিংকথ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা

ফিক্সড টেলিকম সেবার লাইসেন্সের মধ্যে চলে আসবে জাতীয়/বিভাগীয়/জেলা পর্যায়ের আইএসপি (ইন্টারনেট সেবাদাতা), পিএসটিএন (পাবলিক সুইচ টেলিফোন নেটওয়ার্ক) এবং আইপিটিএসপি (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোন সার্ভিস প্রটোকল) সেবা। বিশেষ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে থাকবে স্টারলিংকের মতো স্যাটেলাইট/এনজিএসও সেবা।

বিষয়টি নিয়ে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত লাইসেন্সিং কাঠামো নিঃসন্দেহে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা আনবে। তবে নেটওয়ার্কের গুণগত মানোন্নয়ন ও সেবামূল্য হ্রাসের ক্ষেত্রে এই নীতির ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, খসড়াটিতে মূলত লাইসেন্সের সংখ্যা কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাহেদ আলম আশা প্রকাশ করেন, বিটিআরসি গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করতে একীভূতকরণে উৎসাহিত করবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

খসড়া নীতিমালায় থানা/উপজেলা পর্যায়ের আইএসপিদের লাইসেন্সের পরিবর্তে তালিকাভুক্তির আওতায় আনা হবে। তারা আইসিএসপি বা ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতাদের থেকে ব্যান্ডউইডথ নেবে। রাজস্ব ভাগাভাগিসহ তাদের আর্থিক বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতা বা আইসিএসপির দায়িত্বে চলে যাবে।

‘দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নেই’

বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্সের আওতায় এত দিন দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে আসছিল। লাইসেন্সের স্তর কমিয়ে ফেলায় অনেকের টিকে থাকা কঠিন হবে। কারণ, বড় ও বিপুল আর্থিক সক্ষমতাধারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে।

যেমন দেশে এখন ২৪টির মতো আইজিডব্লিউ অপারেটর রয়েছে। আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের (আইওএফ) সভাপতি আসিফ রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত খসড়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নেই। বহুজাতিক কোম্পানির হাতে এই সেবা খাত তুলে দেওয়া হচ্ছে। আইজিডব্লিউ হিসেবে না থাকলেও তাদেরকে অন্য কোনো স্তরে স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

খসড়ার বিষয়ে আইআইজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিটিআরসির এই নতুন নীতি তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপে সরকারের অনুমোদন অর্থাৎ এই নীতি পাস হতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে লাইসেন্সিং নির্দেশিকা হবে। যাদের প্রয়োজন, তাদের নবায়ন হবে এবং নতুন লাইসেন্সের আবেদনও গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়িত হবে ২০২৭ সালে। এ ধাপে বিদ্যমান লাইসেন্সধারী নতুন লাইসেন্স বিভাগে স্থানান্তরিত হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি সাবেক পরিচালক এবং লিংকথ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসি এখন যে খসড়া করেছে, তা বৈশ্বিক মানের। দেশে অনেক লাইসেন্স, যার ব্যবস্থাপনাও কঠিন। টেলিযোগাযোগ খাতে বিশ্বায়নের দিক থেকে ভালো সেবার জন্য একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। পাশাপাশি সরকারের ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

রকিবুল হাসান আরও বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের ডিজিটাল সেবাদাতাশিল্পের জন্য এত বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। এখানে যৌথ উদ্যোগের ব্যবসাকে উৎসাহ দেওয়া এবং অনেক নীতি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। দিন শেষে সেবার মান উন্নত হবে, গ্রাহকই সুবিধা পাবে এবং বাজার বড় হবে।

তিন ধাপে বাস্তবায়ন

খসড়া নীতিমালায় থানা/উপজেলা পর্যায়ের আইএসপিদের লাইসেন্সের পরিবর্তে তালিকাভুক্তির আওতায় আনা হবে। তারা আইসিএসপি বা ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতাদের থেকে ব্যান্ডউইডথ নেবে। রাজস্ব ভাগাভাগিসহ তাদের আর্থিক বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতা বা আইসিএসপির দায়িত্বে চলে যাবে।
বিভিন্ন ধরনের টেলিকম সেবা-এন্টারপ্রাইজ, এসএমএস (আন্তর্জাতিক/দেশীয়)সহ ছোট পর্যায়ে যারা সেবা দিতে ইচ্ছুক এবং স্বীকৃতি চায়, তারাও তালিকাভুক্তির আওতায় আসবে।

বিটিআরসির এই নতুন নীতি তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপে সরকারের অনুমোদন অর্থাৎ এই নীতি পাস হতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে লাইসেন্সিং নির্দেশিকা হবে। যাদের প্রয়োজন, তাদের নবায়ন হবে এবং নতুন লাইসেন্সের আবেদনও গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়িত হবে ২০২৭ সালে। এ ধাপে বিদ্যমান লাইসেন্সধারী নতুন লাইসেন্স বিভাগে স্থানান্তরিত হবে।

প্রকাশিত খসড়াটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর মাধ্যমে প্রায় দুই দশকের পুরোনো বাস্তবতাবিবর্জিত নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে। বেশি স্তর ও মধ্যস্বত্বভোগী থাকায় সেবার মান খারাপ ছিল। প্রস্তাবিত নীতিতে মধ্যস্বত্বভোগী না থাকলে গ্রাহক ভালো সেবা পাবে। এ জন্য সরকারকে ভালো বাজার প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স স ক র কর ব ট আরস র ন টওয় র ক আইস এক স পর য য় র র আওত য় সরক র র ধরন র ল র জন য এসপ র খসড় য় মত মত উৎস হ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ