মার্তিনেজ আর্জেন্টিনার ‘নায়ক’, ভিলার কি ‘খলনায়ক’
Published: 23rd, April 2025 GMT
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এর চেয়ে অনেক জোরাল শট অবলীলায় রুখে দিয়েছেন। পোস্টের কোনা ঘেঁষে যাওয়া শটও বেশ দূর থেকে ডাইভ দিয়ে ঠেকিয়েছেন। কিন্তু গতকাল রাতে বের্নার্দো সিলভার শটটি কীভাবে মার্তিনেজের হাতে লেগে জালে ঢুকে পড়ল, সেটা একটা বিস্ময়। এই ভুলের পর আর্জেন্টাইন গোলকিপারের ওপর চটেছেন অ্যাস্টন ভিলার সমর্থকেরা।
আরও পড়ুন২০২৬ বিশ্বকাপ: মেসি-রোনালদো-নেইমার, কে থাকবেন কে থাকবেন না৬ ঘণ্টা আগেপ্রিমিয়ার লিগের এ ম্যাচে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ২-১ গোলে হেরেছে ভিলা। ৭ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোলটি সিটির পর্তুগিজ উইঙ্গার সিলভার।
বাঁ প্রান্ত দিয়ে ওমর মারমৌশ ভিলার বক্সে ঢুকে ক্রস করেন। বল ভিলার লেফট ব্যাক লুকাস দিনিয়ের পায়ে লেগে বক্সের ঠিক মাঝে ফাঁকা জায়গায় চলে যায়। দৌড়ে আসা সিলভা চলতি বলেই শট নেন। ভিলা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ বিপদ টের পেয়ে পোস্টের ঠিক মাঝখানে চলে আসেন। সিলভার শটটি মার্তিনেজের প্রায় সরাসরিই ছিল। সহজেই ঠেকানো যায়, এমন শট এবং অনুশীলনে কিংবা ম্যাচে এমন শট তাঁকে বহুবার সহজেই ঠেকাতে দেখা গেছে। কিন্তু মার্তিনেজ এ যাত্রায় সামনে হাত বাড়িয়ে বলটি ঠেকালেও গোল বাঁচাতে পারেননি। হ্যাঁ, কিছুটা দুর্ভাগ্যের শিকার তো হয়েছেনই, তবে মার্তিনেজের মানের গোলকিপারের জন্য এমন শট ঠেকানো ‘রুটিন ওয়ার্ক।’
বল মার্তিনেজের গ্লাভসে লেগে বাঁ পাশে ড্রপ খেয়ে জালে ঢুকেছে। এমন শটে সাধারণত গোলকিপাররা গ্লাভসের সামনের অংশ দিয়ে বল ঠেকান, তাতে বলটা হাতে লেগে সামনের দিকে চলে যায়, কিন্তু মার্তিনেজের ক্ষেত্রে বাঁ দিক দিয়ে বল জালে ঢুকে পড়ায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে এখন বিশ্বকাপজয়ী এই গোলকিপারকে।
অথচ এই মার্তিনেজই আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচে অবিশ্বাস্য কিছু সেভ আছে তাঁর জাতীয় দলের হয়ে। এর সেরা উদাহরণ হতে পারে গত বিশ্বকাপের ফাইনালে অন্তিম মুহূর্তে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানির শটে তাঁর অসাধারণ সেই সেভ। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে নায়ক হয়েও ভিলার জার্সিতে ‘খলনায়ক’ এ পরিণত হচ্ছেন মার্তিনেজ।
আরও পড়ুনলিগ জয় থেকে আর কত ম্যাচ দূরে বার্সেলোনা৪ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ভিলার এক সমর্থক লিখেছেন, ‘এমি মার্তিনেজ ফালতু হয়ে যাচ্ছে। কী একটা নির্বোধ! প্রতি সপ্তাহেই একই ভুল! ভিলার আরেক ভক্ত ক্ষোভ ঝেড়েছেন এভাবে, ‘এমি মার্তিনেজ এত বেশি হাস্যকর গোল হজম করছে যে তাকে সেরা বলা যাচ্ছে না। এমনকি সে শীর্ষ পাঁচেও নেই। কোপা আমেরিকায় পেনাল্টি সেভ করা ছাড়া-যেটায় সে ভালো-সে সাধারণ মানের গোলকিপার।’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এবারের মৌসুমে সেভ করায় শীর্ষ ১০–এ রয়েছেন মার্তিনেজ। এ পর্যন্ত ৮৭টি সেভ করে প্রিমিয়ার লিগ ওয়েবসাইটের এই তালিকায় ৯ম মার্তিনেজ। ১৩৩টি সেভ করে তালিকার শীর্ষে ব্রেন্টফোর্ডের মার্ক ফ্লেক্কেন। শীর্ষ পাঁচে থাকা সবাই ন্যূনতম ১০০টি সেভ করেছেন।
প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত ১৯২ ম্যাচ খেলে ৫৬ ক্লিন শিটের পাশাপাশি মোট ৫৬০টি সেভ করেছেন মার্তিনেজ। পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন ৪টি। বেশ পরিপুষ্ট পরিসংখ্যান হলেও মাঝেমধ্যেই অবাক করা ভুল করে বসেন মার্তিনেজ। সাত দিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে পিএসজির বিপক্ষেও তাঁর ভুলে গোল হজম করেছে ভিলা। ফরাসি ক্লাবটির ফরোয়ার্ড ব্রাডলি বারকোলার ক্রস খুব বাজেভাবে ঠেকান মার্তিনেজ। বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। আশরাফ হাকিমির পায়ে চলে যায় বল এবং পিএসজি তারকা সেখান থেকে গোল করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ লক প র আর জ ন ট স ভ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি
‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’
অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’
একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’
খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’
ঢাকা/তারা