নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে বিসিবির আম্পায়ার্স বিভাগ। বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন আইসিসির এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ।

পুনর্গঠিত হচ্ছে সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটি। যে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়, সেটিও বলবৎ হচ্ছে আবারও।

ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে হৃদয়ের শাস্তি কমানো নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, বিসিবি কার্যালয়ে আজ বিকেলে শরফুদ্দৌলার সঙ্গে আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমানের সভার পর সেটি কমে আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

শরফুদ্দৌলা এরই মধ্যে বিসিবিতে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভার পর সেটি প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছেন তিনি।

সভা শেষে আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈকতকে আমরা পুরো বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ও তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে।’

কারও শাস্তি মওকুফের বা কমানোর এখতিয়ার না থাকলেও হৃদয়ের ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স বিভাগ কেন সেটি করেছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ভুল করেছি। প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল।’ নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি কমানো বা মওকুফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেবল সিসিডিএম বা সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটি।

হৃদয়ের শাস্তি কমানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর আগে সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সাবেক আম্পায়ার ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এনামুল হক। তাঁর জায়গায় এখন বিসিবি পরিচালক নাজমূল আবেদীন টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন ইফতেখার রহমান, ‘আমরা টেকনিক্যাল কমিটি পুনর্গঠন করছি। ফাহিম ভাই (নাজমূল আবেদীন) এটার প্রধান হবেন। হৃদয়ের বিষয়টি এখন টেকনিক্যাল কমিটি দেখবে।’ আজকের সভার বিষয়ে জানতে শরফুদ্দৌলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বোর্ডের একটি সূত্রে জানা গেছে, নিয়মের বাইরে গিয়ে হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা কমানোর সিদ্ধান্তে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ার পর বিসিবি এখন হৃদয়কে নতুন করে বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী এবার সিদ্ধান্তটা নিতে যাচ্ছে সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটি। আম্পায়ার্স বিভাগের শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করে মোহামেডান অধিনায়ককে নতুন করে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সুপার লিগে মোহামেডানের ম্যাচ বাকি এখনো দুটি।

১২ এপ্রিল মিরপুরে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয়কে। তাঁর নামের পাশে যোগ হয় ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট, সঙ্গে করা হয় ৮০ হাজার টাকা জরিমানা। একই ঘটনায় মোহামেডানের পেসার ইবাদত হোসেনকেও জরিমানা করা হয় ৪০ হাজার টাকা।

এই শাস্তি পাওয়ার পরও হৃদয় ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনা যদি অন্যদিকে যায়, আমি মুখ খুলব ইনশা আল্লাহ।’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর শাস্তি বাড়িয়ে তাঁকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও ডিমেরিট পয়েন্টের জন্য হৃদয়কে প্রথমেই দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারতেন ম্যাচ রেফারি, যেটি না করে তাঁকে একরকম ছাড়ই দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও মানেনি মোহামেডান ও হৃদয়। ১৭ এপ্রিল মিরপুরে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচটিতে হৃদয় না খেললেও ২০ এপ্রিল বিকেএসপিতে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে খেলেন। অথচ নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী ওই ম্যাচেও তাঁর মাঠের বাইরে থাকার কথা ছিল।

হৃদয়ের শাস্তি কমানোর জন্য মোহামেডান সিসিডিএমে আবেদন করেছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটি আবেদনে সাড়া না দিলে মোহামেডানের চাপে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটিই বাধ্য হয়ে হৃদয়ের শাস্তি কমায়। প্রক্রিয়াটি ছিল পুরোপুরি নিয়মবহির্ভূত কারণ, শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ারই নেই বিসিবির আম্পায়ার্স বিভাগের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম প য় র স ব ভ গ ন ষ দ ধ কর শরফ দ দ ল এক ম য চ র জন য কম ট র কম ন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের বৈঠকে একমত হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কমিশন ‘অনুঘটক’ হিসেবে ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কমিশন আবার বসবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে  জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সনদের দুটি অংশ। একটি অংশে ঐকমত্যের বিষয়সমূহ এবং অন্য অংশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

শিগগিরই সনদ চূড়ান্ত করা যাবে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’

আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে—সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ সম্পর্কিত বিধান, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন, সংসদ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আপনারা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ আপনারা নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুঘটকের কাজ করবে।’

আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার আজ শেষ দিন। আজ যেসব বিষয় আলোচিত হবে, তার অধিকাংশই সিদ্ধান্তের বিষয়। বিশেষ করে যেসব দায়িত্ব আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আপনাদের জানানো হবে।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কিছু অনালোচিত বিষয়ের আলোচনা হবে। আর সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাবরক্ষক এবং ন্যায়পালসহ কিছু বিষয়ে আলোচনার ফ্লোর থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ছয়টি কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। যার একটি তালিকা দলগুলোর হাতে আছে। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৬ ঘণ্টা আগে

আলী রীয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতের সুযোগ ছিল এবং আছে। আজকের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।

আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুন১২ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ২৯ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনপ্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের খসড়া আজকালের মধ্যে পাবে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ