দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়েছে: আখতার হোসেন
Published: 24th, April 2025 GMT
দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এক সমাবেশ তিনি মন্তব্য করেন।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, রানা প্লাজার মালিক রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে ভবনে ফাটল থাকা সত্ত্বেও কারখানাগুলো খোলা রাখার হুকুম দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতিকে এমনভাবে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, যে দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়।
এনসিপির শ্রম উইং এ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে রানা প্লাজা ধসে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনের পর সরকারি চাকরি করে পেট চলবে, পরিবারের ভরণপোষণ করবে—এই সক্ষমতা নেই। দেশের অধিকাংশ মানুষ খেটে-খাওয়া শ্রমিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির শ্রমিকেরা কর্মস্থলে তাঁদের শ্রম জীবনকে নিরাপদে অতিবাহিত করতে পারবেন—এই নিশ্চয়তাটুকু সরকার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নাই। এ জন্য দায়ী দেশের দুর্বৃত্তায়ন, পচে-গলে যাওয়া রাজনীতি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজ পরিচালনার অনুমিত চাইলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার বাধা দেয়। কারণ, তারা দেশে যে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, রানা প্লাজার মধ্য দিয়ে তা আন্তর্জাতিক মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সমাজে যাতে প্রকাশিত না হয়, সে জন্য এই অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরের ঘটনা আরও বীভৎস। ভবনে আটকে থাকা যাঁদের জীবনপ্রদীপ তখনো নিভে যায়নি। তাঁদের উদ্ধারের নাম করে লাশগুলো গুম করার মেকানিজম করেছিল সাভারের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এনাম (সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান)।’ তিনি বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খুনি হাসিনা, এনাম, সোহেল রানাদের (রানা প্লাজার মালিক) পরাজয় হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুতগতিতে করার আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এনসিপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল, ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দিবসকে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ২৪ এপ্রিল সব শিল্প কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে। এদিনে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিরসনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও ক্ষতিপূরণসহ আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত হাসপাতাল সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই স্থাপন করতে হবে। রানা প্লাজায় যেসব অনুদান এসেছে, সেগুলো যাঁরা কুক্ষিগত করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য আসা অনুদান শ্রমিকদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করতে হবে। শ্রমিকদের যাঁরা শোষণ করেন, কর্মস্থলে দুর্বল করে রাখেন, শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ যাঁরা দেন না, তাঁদের রাষ্ট্রীয় পদপদবি ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
সমাবেশে এনসিপির শ্রম উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, রিফাত রশীদ, ফয়সাল মাহমুদ, জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মেহেরাব সিফাত, রিয়াজ মোরশেদ, যুগ্ম সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিডসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন ন শ চ ত কর এনস প র সরক র র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩