গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন: শেখ মইনউদ্দিন
Published: 24th, April 2025 GMT
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দেখলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। তিনি বলেছেন, তবেই ন্যায়ভিত্তিক ও সম–অধিকারের বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা সফল হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ভবনে একটি সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ মইনউদ্দিন এ কথা বলেন। নারীর জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত গণপরিবহন নিশ্চিতে ‘হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস’ শীর্ষক এ প্রচারাভিযানের আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ডিটিসিএ, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস।
গণপরিবহনে নারীদের প্রতি হয়রানি বন্ধ করতে হবে মন্তব্য করে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘সারা বিশ্বেই নারীরা গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। তবে এই বাংলাদেশটা আমাদের। গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি রোধ করার দায়িত্ব সবার।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘অনেক সময় হয়রানি দেখলেও আমরা চুপ করে যাই। কিন্তু চুপ করে গেলে তো প্রতিকার হলো না। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। পুরুষদের বুঝতে হবে, নারীদের সমাজে সমান অধিকার ও সম্মান প্রাপ্য।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, ‘এই প্রচারাভিযান প্রত্যেক যাত্রী, চালক, কন্ডাক্টর এবং নীতিনির্ধারকের প্রতি এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান, যেখানে নারীদের প্রতি হয়রানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে নারী ও কন্যারা গণপরিবহনে চলাচলে নিরাপদ ও স্বাগত বোধ করবে।’
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারী ও কন্যা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় স্বাধীনভাবে, নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলাচলের অধিকার রাখে। সেটা ঢাকার মেট্রোরেল হোক, বাস হোক বা দেশের অন্য যেকোনো গণপরিবহন হোক।
সভাপতির বক্তব্যে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি যাতে এই প্রচারাভিযান দৃশ্যমান ও কার্যকর হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের বার্তাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে যাতে পৌঁছাতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, বিআরটিসি, ঢাকা চাকা এবং নগর পরিবহনের কর্মীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।’
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, নারীবান্ধব গণপরিবহন তৈরিতে এখনো কিছু জরুরি সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। যেমন নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং এমন একটি ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করবে, যেকোনো ধরনের হয়রানি ঘটলেই দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়।
স্বাগত বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বর্তমান সরকার এসেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেই অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা। আজ যদি নারীরা গণপরিবহনে অনিরাপদ বোধ করেন, সেটাও তাঁর প্রতি বৈষম্য। কারণ, নিরাপদে তিনি তাঁর গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
শাহীন আনাম বলেন, ‘নারীরা যে পেশায় থাকুক, যে পোশাকই পরুক না কেন, তার প্রতি অশালীন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীদের প্রতি হয়রানির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।’
এর আগে এই প্রচারাভিযানের আওতায় গত ১৬ থেকে ২০ মার্চ বাসচালক ও চালকের সহকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে নারীবান্ধব গণপরিবহন গড়তে প্রশিক্ষণ পান ঢাকা চাকা, নগর পরিবহন, বিআরটিসি ও হানিফ পরিবহনের ১৬০ জনের বেশি পরিবহনকর্মী। আজ তাঁদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন।
প্রশিক্ষণ নেওয়া বাসচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চালক ও চালকের সহকারীদের আরও বেশি প্রশিক্ষণের আওতায় আনা দরকার। এখন থেকে পরিবহনে নারীদের কেউ হয়রানি করলে আমরা প্রতিবাদ করব। তাতে যদি কাজ না হয়, তাহলে প্রশাসনকে জানাব।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে গণপরিবহনে নারীরা কীভাবে হয়রানির শিকার হন, তা নিয়ে একটি নাটিকা উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে ‘হোল্ড দ্য বার, নট হার স্পেস’ প্রচারাভিযানের আওতায় প্রশিক্ষণের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ খ মইনউদ দ ন গণপর বহন য ন হয়র ন র আওত য় পর বহন ন র পদ সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির নাহিদ এ কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠক হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই সরকার একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একটা সমর্থন আছে। ফলে জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই করিডর বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে থাকবে, তা তারা (এনসিপি) এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবিক করিডরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য–বিবৃতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত।
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সে উদ্দেশ্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নিম্ন ও উচ্চ উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এনসিপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলন নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। উনারা বলেছেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’
বৈঠকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চলার সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ে দুই দল একমত।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনগণের অধিকার হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের জন্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি পুরোনো বন্দোবস্তের জন্য কেউ চেষ্টা করে, জনগণ তা মেনে নেবে না।
সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির।
বিষয়গুলো হলো দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন; গণহত্যা ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা এবং সর্বশেষ মৌলিক সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
মতবিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ।