বৃহস্পতিবার হইতে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযানের সূচনা হইলেও মূল্যের কারণে লক্ষ্যমাত্রা কতখানি পূরণ হইবে, উহা লইয়া শঙ্কার উদ্ভব হইয়াছে। একই দিবসে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধানের সরকারি মূল্যে কৃষকের শঙ্কা কাটিতেছে না। প্রায় প্রতি বৎসর এই প্রকার সংকট আমরা প্রত্যক্ষ করিতেছি। যাহার ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং বাজারেও সরকার হস্তক্ষেপ করিবার সক্ষমতা অর্জন করিতে পারে না। ইহাতে দীর্ঘ কালব্যাপী চাউলের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা স্পষ্ট। সমকালের অপর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাউলের মূল্য যতটুকু হ্রাস পায়, বৃদ্ধি পায় তাহার অধিক। তজ্জন্যই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাউল সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার এই বৎসর ধান-চাউলের মূল্য গত বৎসর অপেক্ষা কেজিপ্রতি চার টাকা বৃদ্ধি করিয়াছে বটে, বাস্তবতার আলোকে উহা যথার্থ কিনা– সেই প্রশ্ন সমুপস্থিত। সরকার যদিও বলিতেছে, অতিরিক্ত মূল্যে কৃষক লাভবান হইবেন। অবশ্য সরকারি গুদামে ধান প্রদানের ক্ষেত্রে মূল্যই প্রধান প্রতিবন্ধক নহে। বিবিধ শর্তের কারণেও প্রান্তিক চাষি সরকারি গুদামে ধান দিতে পারেন না। আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান পরিবহনসহ বিবিধ বিড়ম্বনায় কৃষক মহাজনের নিকটই ধান বিক্রয়ে অগ্রাধিকার দিয়া থাকেন। ইহাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, অপরদিকে সরকারও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করিতে পারে না।
আমরা জানি, সরকারের সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী গুদামে সর্বক্ষণ নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান-চাউল মজুত থাকিবার লক্ষ্য হইলেও বাস্তবে তাহা পূরণ হয় না বলিলেই চলে। এমনকি সরকার আমদানির মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করিলেও তাহা সম্ভব হয় না। এহেন পরিস্থিতি চাউলের বাজারে অস্থিরতা বৃদ্ধির শঙ্কা তৈয়ার করে। আমরা সরকারের আমদানি প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাইলেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অভ্যন্তরীণ বাজারের উপরেই নির্ভরতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়া আসিতেছি। সেই কারণেই ধান-চাউলের সংগ্রহ নিশ্চিতকরণে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
সরকার চলতি বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লক্ষ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিয়াছে, যথায় ৪৯ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাউল ক্রয় হইবে ১৪ লক্ষ টন। বোরো মৌসুমেই অধিক উৎপাদন হয় বিধায় এই ধান-চাউল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই সময়কেই প্রাধান্য দিতে হইবে। তজ্জন্য সরকারকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করিতে হইবে। গত বোরো মৌসুমেই যথায় ৫ লক্ষ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তথায় এইবার উহা হ্রাসকরণের হেতু কী? আমরা বিশ্বাস করি, সরকার যদি লক্ষমাত্রার সম্পূর্ণই কৃষকের নিকট হইতে সরাসরি ক্রয় করিতে পারে, উহাতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হইবে। এই ক্ষেত্রে আর্দ্রতা সমস্যার সমাধান হিসাবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের মূল্য নির্ধারণসহ অন্যান্য শর্ত শিথিল করা যাইতে পারে।
চাউলের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে চাউল কল মালিকদের কারসাজি আমরা দেখিয়াছি। সরকারের মজুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হইবার ক্ষেত্রেও তাহাদের দায় উপেক্ষা করিবার অবকাশ নাই। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষক, চাউল কল মালিক, সরকার তথা সকল পক্ষের আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। এই ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে সরকারের দায়িত্ব অধিকতর। তজ্জন্য চাউল কল মালিকগণের সহিত সমঝোতার মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। কৃষকের প্রধান অভিযোগ যেহেতু মূল্য লইয়া, উহাও বিবেচনা করিতে হইবে বৈ কি। এইবার সেচ যন্ত্রের জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য, তৎসহিত বৃদ্ধি পাইয়াছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাইয়াছে। তজ্জন্য কৃষকের ন্যায্যমূল্য অবশ্যই অগ্রাধিকারপ্রাপ্য। সেই অগ্রাধিকার যদি চাউল কল মালিকগণের ধানের ক্রয়কাল অতিক্রম করিয়া যায়, তাহা হইলে তো সকলই গরল ভেল!
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন চ উল র লক ষ য সরক র র চ উল ক চ উল র অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।
তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।
শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’