সিরাজদীখান উপজেলার মালখানগর এলাকার আলুচাষি খালেক মিয়া উৎপাদিত আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। বসতবাড়িতে মাচা তৈরি করে ৬০০ মণ আলু রেখেছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিন পচে যাচ্ছে কষ্টে উৎপাদিত ফসল। সেগুলো বেছে ফেলে দিচ্ছেন। বৃষ্টি হলেও পচন দেখা দেয়। এতে উদ্বেগ কাটছে না জানিয়ে তিনি বলছিলেন, ৫০ কেজির এক বস্তার দাম দিচ্ছে ৮০০ টাকা। ১০০ বস্তার দাম ৯২ হাজার টাকা বলেছে। অথচ ১০০ বস্তা উৎপাদনে ব্যয় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজিতে ৫-৭ টাকা লোকসান হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জে চলতি বছর আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আলুর ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বিপদে আছেন কৃষক। ভালো দাম পাচ্ছেন না। এতে অনেকে বাড়িতেই সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু এর একটা অংশ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন সংকটের কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, এমন পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তাদের লোকসান বেড়েছে। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ন্যায্য দাম না পেলে আলুর আবাদে নিরুৎসাহিত হবেন কৃষক। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়বে। যদিও সামনের দিনগুলোয় আলুর দাম বাড়বে বলে আশা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। প্রভাবশালী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা হিমাগার অগ্রিম ভাড়া নিয়ে আলু সংরক্ষণ করায় প্রান্তিক চাষিরা বিপদে আছেন বলে জানান কৃষক সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, শ্রমিকের মজুরি, জমির বর্গা ও হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে। ফলে খরচ বেশি হচ্ছে, অথচ দাম কমেছে। এবার তাঁর ৪ লাখ টাকা লোকসান হবে। তাঁর মতো জেলার অধিকাংশ কৃষকের একই অবস্থা।
দেশের আলুর চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দেয় মুন্সীগঞ্জ। জেলায় আলু মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে ওঠে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার দুই একর বেশি জমিতে আবাদ করেন সিরাজদীখানের মোজাম্মেল ব্যাপারী। এখন লোকসানের শঙ্কা জানিয়ে বলেন, যে খরচ হয়েছে এবং যে দাম, তাতে কৃষক লোকসানে পড়েছেন।

চলতি বছর জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১০ লাখ টন। জেলার ৫৮টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী চার লাখ ৬০ হাজার টন সংরক্ষণ করা হয়েছে। জায়গা না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় বাঁশের মাচায় সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন কৃষক। তাও পচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করছেন তারা। সরকারি হিসেবে এবার কেজিপ্রতি আলুর উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা। গত বছর ছিল ১৩ টাকা। কিন্তু কৃষক জানিয়েছেন, এবার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। অথচ ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দাম পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় পাইকারিতে ১৫-১৭ ও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামের শাহাবুদ্দিন হালদার, আলম শেখসহ কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৮ টাকা পর্যন্ত। লোকসান কমাতে আলু হিমাগারে রাখেন তারা। কিন্তু এবার ভাড়া কেজিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করেছে হিমাগার সমিতি। গত বছর ৫০ কেজি বস্তার ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এবার ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’।

কৃষকদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেন সস্তায় আলু কিনতে পারে, সেই লক্ষ্যেই হিমাগারগুলো সংরক্ষণ বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে অনেকে জমি বা বাড়ির আঙিনায় বিকল্প পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে আলুতে পচন ধরায় কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বছর লোকসান হবে– কল্পনাও করেননি বলে জানিয়েছেন কৃষক। উৎপাদন খরচের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, এবার সিন্ডিকেটের কারণে কয়েক গুণ দামে বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ কিনতে হয়েছে। ফলে প্রতি কানি জমিতে (১৪০ শতাংশ) আবাদে ব্যয় হয়েছে পৌনে ৪ লাখ টাকা। এলাকাভিত্তিক এ খরচ কম-বেশি হতে পারে। সে হিসাবে প্রতি মণে খরচ পড়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সিন্ডিকেটের লোকজন অন্য জেলা থেকে আলু এনে মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে মুক্তারপুর কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতি কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। বস্তা প্রতি ভাড়া ৪০০ টাকা। আগে ভাড়া ২০০ টাকা রাখলেও বিদ্যুৎসহ সার্বিক খরচ বেড়েছে। 
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা শেষ হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও আলুর দাম বাড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ