বাজারদরে খরচ ওঠে না, ঘরে পচে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের আলু
Published: 24th, April 2025 GMT
সিরাজদীখান উপজেলার মালখানগর এলাকার আলুচাষি খালেক মিয়া উৎপাদিত আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। বসতবাড়িতে মাচা তৈরি করে ৬০০ মণ আলু রেখেছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিন পচে যাচ্ছে কষ্টে উৎপাদিত ফসল। সেগুলো বেছে ফেলে দিচ্ছেন। বৃষ্টি হলেও পচন দেখা দেয়। এতে উদ্বেগ কাটছে না জানিয়ে তিনি বলছিলেন, ৫০ কেজির এক বস্তার দাম দিচ্ছে ৮০০ টাকা। ১০০ বস্তার দাম ৯২ হাজার টাকা বলেছে। অথচ ১০০ বস্তা উৎপাদনে ব্যয় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজিতে ৫-৭ টাকা লোকসান হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে চলতি বছর আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আলুর ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বিপদে আছেন কৃষক। ভালো দাম পাচ্ছেন না। এতে অনেকে বাড়িতেই সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু এর একটা অংশ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন সংকটের কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, এমন পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তাদের লোকসান বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ন্যায্য দাম না পেলে আলুর আবাদে নিরুৎসাহিত হবেন কৃষক। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়বে। যদিও সামনের দিনগুলোয় আলুর দাম বাড়বে বলে আশা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। প্রভাবশালী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা হিমাগার অগ্রিম ভাড়া নিয়ে আলু সংরক্ষণ করায় প্রান্তিক চাষিরা বিপদে আছেন বলে জানান কৃষক সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, শ্রমিকের মজুরি, জমির বর্গা ও হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে। ফলে খরচ বেশি হচ্ছে, অথচ দাম কমেছে। এবার তাঁর ৪ লাখ টাকা লোকসান হবে। তাঁর মতো জেলার অধিকাংশ কৃষকের একই অবস্থা।
দেশের আলুর চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দেয় মুন্সীগঞ্জ। জেলায় আলু মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে ওঠে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার দুই একর বেশি জমিতে আবাদ করেন সিরাজদীখানের মোজাম্মেল ব্যাপারী। এখন লোকসানের শঙ্কা জানিয়ে বলেন, যে খরচ হয়েছে এবং যে দাম, তাতে কৃষক লোকসানে পড়েছেন।
চলতি বছর জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১০ লাখ টন। জেলার ৫৮টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী চার লাখ ৬০ হাজার টন সংরক্ষণ করা হয়েছে। জায়গা না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় বাঁশের মাচায় সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন কৃষক। তাও পচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করছেন তারা। সরকারি হিসেবে এবার কেজিপ্রতি আলুর উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা। গত বছর ছিল ১৩ টাকা। কিন্তু কৃষক জানিয়েছেন, এবার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। অথচ ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দাম পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় পাইকারিতে ১৫-১৭ ও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামের শাহাবুদ্দিন হালদার, আলম শেখসহ কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৮ টাকা পর্যন্ত। লোকসান কমাতে আলু হিমাগারে রাখেন তারা। কিন্তু এবার ভাড়া কেজিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করেছে হিমাগার সমিতি। গত বছর ৫০ কেজি বস্তার ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এবার ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’।
কৃষকদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেন সস্তায় আলু কিনতে পারে, সেই লক্ষ্যেই হিমাগারগুলো সংরক্ষণ বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে অনেকে জমি বা বাড়ির আঙিনায় বিকল্প পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে আলুতে পচন ধরায় কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বছর লোকসান হবে– কল্পনাও করেননি বলে জানিয়েছেন কৃষক। উৎপাদন খরচের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, এবার সিন্ডিকেটের কারণে কয়েক গুণ দামে বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ কিনতে হয়েছে। ফলে প্রতি কানি জমিতে (১৪০ শতাংশ) আবাদে ব্যয় হয়েছে পৌনে ৪ লাখ টাকা। এলাকাভিত্তিক এ খরচ কম-বেশি হতে পারে। সে হিসাবে প্রতি মণে খরচ পড়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সিন্ডিকেটের লোকজন অন্য জেলা থেকে আলু এনে মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে মুক্তারপুর কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতি কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। বস্তা প্রতি ভাড়া ৪০০ টাকা। আগে ভাড়া ২০০ টাকা রাখলেও বিদ্যুৎসহ সার্বিক খরচ বেড়েছে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা শেষ হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও আলুর দাম বাড়বে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল