মানিকগঞ্জে ঔষুধ প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবে ফার্মেসি মালিকরা অনুমোদন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছেন। আর এসব ফার্মেসির ওষুধ খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন রোগীরা। রাইজিংবিডির অনুসন্ধান বলছে, মানিকগঞ্জে কমপক্ষে ৭০টি ফার্মেসি অনুমোদন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছেন। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষের দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।

ডাক্তার দেখানোর পর বা হাসপাতালে ভর্তি থেকে রোগীর সুস্থ হতে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োজন হয়। সাধারণত সবাই নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে জীবন রক্ষাকারী এসব ওষুধ কিনে থাকেন। নিয়মানুযায়ী রোগীদের কাছে যে কেউ ওষুধ বিক্রি করতে পারবেন না। না জেনে বুঝে এসব ওষুধ বিক্রি করলে জীবন রক্ষার বদলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। ওষুধ বিক্রি করতে বা ফার্মেসি খুলতে যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করে ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়। তবে অনেক ফার্মেসি মালিক কোন অনুমোদন না নিয়েই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রি করছেন। ফলে রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল গেট, শহীদ স্মরনী সড়ক, উপজেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে অর্ধশত অনুমোদনহীন ফার্মেসি। এসব ফার্মেসি থেকে জীবন রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধসহ প্রাথমিক চিকিৎসার সকল ওষুধই বিক্রি হচ্ছে। নিয়ম নীতি না মেনে ওষুধ বিক্রি করায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। 

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা কাঁচাবাজার। কাঁচাবাজার থেকে পশ্চিম দিকে সেওতা এলাকার দিকে চলে গেছে একটি সড়ক। এ সড়কের আশেপাশে গড়ে উঠেছে শহরের নামিদামি বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে শত শত রোগী ভীড় করেন এসব ক্লিনিক হাসপাতালে। ক্লিনিক-হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর রোগীর স্বজনরা কাঁচাবাজার মার্কেট থেকে ওষুধ কেনেন। কাঁচাবাজার সড়কের বড় ফার্মেসির নাম মাস্টার ফার্মেসি। প্রতিদিন শত শত মানুষ এ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন। কিন্তু এ মাস্টার ফার্মেসির ঔষুধ প্রশাসনের কোনো অনুমোদন নেই। 

মানিকগঞ্জের হাসপাতাল গেটের পাশেই দলিল সুপার মার্কেটের গলির শেষে রয়েছে ফ্রেন্ডস ফার্মেসি। এ ফার্মেসির নেই ওষুধ বিক্রির অনুমোদন। জয়রা রোড এলাকার আল আবরার হাসপাতালের আল আবরার ফার্মেসিসহ জেলা শহর, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকার অনেক ফার্মেসি অনুমোদন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছেন। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ফার্মেসি মালিকরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। 

মাস্টার ফার্মেসির মালিক নিহার রঞ্জন সরকার বলেন, “পাঁচ মাস ধরে ফার্মেসির ব্যবসা করছি। ফার্মেসির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু এখনো হাতে পাইনি।” 

অনুমোদন না পাওয়ার আগেই কেন ওষুধ বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আবেদনের সাথে ফার্মেসির ছবি সংযুক্ত করে দিতে হয়, তাই ফার্মেসি চালু রেখেছি।” 

আল আবরার ফর্মেসির মালিক আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, “আল আবরার হাসপাতালের ইনডোরে ওষুধ বিক্রি করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে বাইরে ওষুধ বিক্রি করা হয় না। তাই আবেদন করিনি। আগামীতে আবেদন করে ওষুধ বিক্রি করব।” 

মানিকগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি সাজমুল হক বলেন, “যেসকল ফার্মেসি মালিকরা অনুমোদন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করছেন, তাদের আমরা সব সময় অনুমোদন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে থাকি। তারপরও তারা আমাদের সমিতির অনুরোধ না রাখলে এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের করণীয় থাকে না।”

মানিকগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রিতে অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই যারা ওষুধ বিক্রি করছেন তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। যেসব ফার্মেসি মালিকরা ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রি করছেন ঔষধ প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে পারে।” 

ঔষধ প্রশাসন মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুলতানা রিফাত ফেরদৌস বলেন, “অনুমোদনহীন ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারপরও এসব ফার্মেসিগুলো পরিচালিত হয়। এসব ফার্মেসিগুলোর ওষুধ বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এসব ফ র ম স ম ন কগঞ জ ম ল কর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান

জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’

টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’

জাতিসংঘের বিশেষ এই র‍্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’

ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি