সংগ্রামী স্বপ্নার সাফল্যের স্বাক্ষর
Published: 26th, April 2025 GMT
মাত্র চার হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু। আজ তাঁর পুঁজি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। কর্মচারী আটজন। তাঁর লক্ষ্য– গ্রামীণ নারীদের জন্য একটি পোশাক কারখানা গড়ে তোলা।
এটি এক সাহসিনী, সংগ্রামী নারীর গল্প। তিনি স্বপ্না রানী ঘোষ। সমাজের বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যে নিজেকে সফল এক উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
১৯৮৭ সালে কুষ্টিয়া শহরে জন্ম স্বপ্নার। বাবা রঞ্জিত কুমার বসু ও মা কাঞ্চন রানী বসুর তিন মেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে দশম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। তখনই রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আমতলা গ্রামের স্বপন ঘোষের সঙ্গে বিয়ে হয় স্বপ্নার।
স্বামীর পেশা ছিল ফটোগ্রাফি আর সংসারে সদস্য সাতজন। সামান্য আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে উঠছিল। পরিস্থিতির চাপে স্বপ্না শ্বশুরবাড়ির অনুমতি নিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করেন। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেন, সংসারের সচ্ছলতার জন্য কিছু একটা করবেন। পরিবারকে অনেক বোঝানোর পর মেলে সম্মতি, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামের পথচলা।
২০১৪ সালে স্বামীর দেওয়া দুই হাজার এবং বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া দুই হাজার– মোট চার হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায় নামেন স্বপ্না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় বিক্রি শুরু করেন। পাশাপাশি হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক বাটিক ও সেলাইয়ের কাজ করেও বাড়তি আয় করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাঁর পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে।
এরপর উপজেলা সদরে মনিমুকুর কিন্ডারগার্টেনের সামনে ছোট একটি দোকান ভাড়া নেন। সেখানে ব্যবসা করে সফল হয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তাঁর। পরে বালিয়াকান্দি বাজারের লস্কর টাওয়ারের দ্বিতীয়তলায় একটি দোকান নেন। একমাত্র কলেজপড়ুয়া মেয়ের নামে দোকানের নাম রাখেন ‘সন্ধি কালেকশন’। দুই কর্মচারীর সহযোগিতায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা সামলান। কর্মচারীদের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা করে।
শুধু কাপড়ের ব্যবসায় থেমে থাকেননি স্বপ্না। তিনি ফুলেরও একটি দোকান চালু করেন। যেখানে ফুলের ডালা, তোড়া, বিয়ের গাড়ি সাজানো এবং বিয়েবাড়ির আল্পনার কাজ করা হয়। এ দোকানে কাজ করেন আরও ছয়-সাতজন কর্মচারী, যাঁরা কাজের পরিমাণ অনুযায়ী মজুরি পান।
বর্তমানে স্বপ্নার মাসিক আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। তাঁর এই আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলছে সংসার, সন্তানদের পড়াশোনা এবং জীবনের অন্যান্য ব্যয়। এরই মধ্যে তিনি ১০ লাখ টাকা মূল্যের ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। এখন তাঁর একটি সুখী ও সচ্ছল পরিবার।
কঠিন পরিশ্রম আর অদম্য মানসিকতার জন্য স্বপ্না পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২৪ সালের ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ হিসেবে ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার (জয়িতা)’।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে স্বপ্না বলেন, ‘আমি চাই, গ্রামীণ নারীদের জন্য কাজ করতে। আমার স্বপ্ন একটি পোশাক কারখানা গড়ে তোলা, যেখানে গ্রামের মেয়েরা কাজ করে নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা জেসমিন বলেন, ‘স্বপ্না আজ সমাজের নারীদের প্রতিনিধি। তিনি প্রমাণ করেছেন, কোনো নারীই অসহায় নয়। প্রয়োজন শুধু সৎসাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি। স্বপ্না আমাদের সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস ক জ কর র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।