বগুড়ায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত ধান থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৪ টন। বাজারে দামও ভালো থাকায় লাভবান হবেন বলে আশাবাদী কৃষক। ইতোমধ্যে পেকেছে ৩০ শতাংশ ধান, ৫ শতাংশ কাটাও হয়েছে। ক্ষেতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও উদ্বেগ কাটছে না কৃষকের। কারণ কালবৈশাখী। শেষ সময়ে এসে আবহাওয়া বৈরী হলে কষ্টের ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও কয়েক দিনের মধ্যে ঝড় হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। বগুড়ার আবহাওয়াবিদ আশিকুর রহমানের ভাষ্য, গত বছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিকেই দু’দফা ঝড় হয়েছিল। এবার এখনও হয়নি। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল রহমান বলেন, গত বছর ঝড়ে প্রায় ২ শতাংশ ধান ঝরে গিয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত ঝড় না হলেও আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর একই সময়ে মাঠে ছিল ৯০ শতাংশের মতো। এ সময়ের মধ্যে ১০ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছিলেন কৃষক। এবার এখনও মাঠে যে ধান আছে, তা তুলতে অন্তত ২৫ দিন লাগবে। এর মধ্যে ঝড় হলে ধান ঝরে যাবে। আবহাওয়ার কারণে গত বছর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। মাঠে আছে ৯৫ শতাংশ। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে জোরেশোরে। বাজারে নতুন কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছেন কৃষক।
সোনাতলা উপজেলার বালুপাড়া এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন তিনজন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। তিনি বলেন, এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২৫ মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন। গত বছর গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২৩ মণ। দামও গত বছরের চেয়ে এবার বেশি। এদিকে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় পাকা ধান জমিতে না রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার হাট-বাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৫০ টাকা মণ দরে। গত শুক্রবারে রনবাঘাহাটে ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন কৃষক মুনসুর আলী। তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এবার ফলন ভালো হয়েছে, দামও বেশি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৯ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬ হাজার ৬৯৪ টন। চলতি বছর প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ২৬ মণ হারে ফলন পাওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধানের আবাদ ব্যয়বহুল হলেও লাভের পরিমাণ বেশি। উপজেলার কৃষকরা এ ধানের ওপর বেশি নির্ভরশীল। গত বছরেও এখানে বাম্পার ফলন হয়েছিল। নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা থাকায় কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ভালো ফলনের সুফল পাবেন কৃষক।
সরকারিভাবেও এবার ধানের দাম ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ছিল ৩৩ টাকা কেজি কিনলেও এবার হয়েছে ৩৬ টাকা। প্রতি মণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকা। অনুকূল আবহাওয়া, ভালো বীজ ও রোগবালাই না হওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সোহেল মো.

শামসুদ্দিন ফিরোজ বলেন, এবার বোরো ধানের আবাদের জন্য সবকিছু অনুকূলে ছিল। নতুন জাতের ধান রোপণে উৎপাদন বাড়ছে। এখনকার মতো আবহাওয়া সামনের দিনগুলোয় অব্যাহত থাকলে কৃষকের ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ গত বছর উৎপ দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ