শাহাদাতের ক্ষমতা বাড়লেও গুরুত্ব কমেছে দলে
Published: 26th, April 2025 GMT
কথা ছিল নগর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও দলে মূল্যায়ন করা হবে ডা. শাহাদাত হোসেনকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান অথবা যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে তাকে, এমন আলোচনাও ছিল নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু সেটা হয়নি।
২০২৪ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর ১০ মাস পার হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাকে। ২০২৪ সালের ৭ জুলাই দুই সদস্যবিশিষ্ট মহানগর বিএনপির কমিটি এবং পরবর্তীতে একই বছরের ৪ নভেম্বর ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সাবেক আহ্বায়ক হিসেবে পদাধিকার বলে এক নম্বর সদস্য করা হলেও উপেক্ষা করা হয় তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিএনপি নেতাকে। সেই কমিটিতে স্থান হয়নি তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হাতাশা রয়েছে এই বলয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফলে দলে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন তারা।
তবে আদালতের রায়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে দিন-রাত সমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডা.
বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ফলে দলের হাইকমান্ড দলকে নতুন করে সাজাতে তাকে সরিয়ে নগর বিএনপিকে পুনর্গঠন করেছে। তবে একইসঙ্গে তাকে মূল্যায়ন না করায় বিষয়টি নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল আসতে পারে। বিভিন্ন পদে নতুন মুখ আসতে পারে। তখন তাকে মূল্যায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই এ বিষয়ে চূড়ান্ত নেবেন।
দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত ডা. শাহাদাত হোসেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নগরীতে টানা ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এ সময়ে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, জেলও খেটেছেন। ২০২১ সালের গত ২৯ মার্চ নগরীর কাজির দেউড়ী এলাকায় সমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুটিসহ তিনটি মামলায় আসামি করার পাশাপাশি সেদিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫২ দিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের হাতে কয়েক দফা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এমনকি শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে কয়েকজন বিএনপি নেতার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই সময় নগরীর বাদশা মিয়া রোডে ডা. শাহাদাতের বাসায়ও দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং আরও আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সুসময়ে দলে তাকে মূল্যায়ন করা হবে— এমনটিই আশা করেছিলেন তিনি ও তার সমর্থকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর দলে নতুন করে মূল্যায়ন না করায় রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছেন না ডা. শাহাদাত হোসেন। ফলে রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে তিনি কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখে মেয়র হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রয়াত এএফ হাসান আরিফ মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাতকে শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এর আগে আদালত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবর্তে তাকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনকালে ডা. শাহাদাতের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির ২৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়। তাদের বেশিরভাগই তার অনুসারী। ডা. শাহাদাত ও বক্করের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা নেতাদের মধ্যে বর্তমান কমিটিতে স্থান পাননি নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য শামসুল আলম, হাজী মোহাম্মদ আলী, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব আলম, মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন আহমেদ। ফলে ডা. শাহাদাতের সঙ্গে পদবঞ্চিত অনুসারী নেতাকর্মিরাও মাঠের রাজনীতিতে অনেকটাই নিস্ক্রিয়।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল এবং দলটির নগর বিএনপি শাখাও একটি বড় এলাকা ও অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখান থেকে মাত্র ৫৩ জন সুযোগ পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে দলের জন্য অনেকেরই ত্যাগ থাকার পরও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা যায়নি। তবে নানাভাবে তাদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দল পুনগর্ঠনকালে এসব ত্যাগী নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে মূলয়ান করা হবে।’
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে গঠন করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি। সেই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সেই দুইজনকে নেতৃত্বে রেখে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় কেন্দ্র থেকে। ২০২৪ সালের জুনে আবার সেই কমিটি বিলুপ্ত করে এরশাদ উল্লাহকে সভাপতি ও নাজিমুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ৬ আগস্টের আগে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কমিটি ছিল সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. শাহাদাত। বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমীর খসরু।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ নগর ব এনপ র ২০২৪ স ল র ব এনপ র স ব এনপ র ক স ই কম ট গঠন কর অন স র র জন ত কম ট ত র য় কম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠান
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, যুবসমাজ শুধু আমাদের ভবিষ্যৎই নয়, বাংলাদেশে তারা আমাদের ‘বর্তমান’। এক বছর আগে, তাদের হাত ধরেই সমতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবি সার্বজনীন জন-আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয়।
আরো পড়ুন:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার সিদ্ধান্ত সরকারের বড় অসতর্কতা: মঞ্জু
গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস
তৌহিদ হোসেন আরো বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য- সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।
তিনি তার বক্তব্যে বিগত এক বছরে বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন বলেন, তারুণ্যের প্রতি আস্থা রাখলে তারা জাতি গঠনের কেন্দ্রে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, যারা এক সময় মিছিলের অগ্রভাগে ছিল, আজ তারা নীতিনির্ধারণে অংশ নিচ্ছে, আর আগামী দিনের দিকনির্দেশনা ঠিক করতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে তারুণ্যের নেতৃত্ব জাতিসংঘের যুববিষয়ক নীতি ও কার্যক্রমের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল গণআন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানমালার আলোকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত তথ্যচিত্র এবং পোস্টার, দেয়াললিখন ও আলোকচিত্র প্রভৃতির প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নবযাত্রায় যুব সমাজের অনন্য অবদানকে উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এই বিশেষ আয়োজনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ইয়ুথ অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ বক্তব্য রাখেন।
ড. বালাকৃষ্ণণ তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ সমাজ পরিবর্তনে যুবসমাজের সত্যিকারের অংশগ্রহণকে সর্বদাই উৎসাহিত করে থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা যুবশক্তি তাই অন্যান্য সমাজের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন সমস্যার দুই-জাতি-ভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ