Samakal:
2025-06-16@05:33:48 GMT

অনন্তযাত্রা কি থেমে যাবে

Published: 27th, April 2025 GMT

অনন্তযাত্রা কি থেমে যাবে

তারা যেন পৃথিবীর নাড়ি-ছেঁড়া ধন। না ফেরার দেশে যতই ছুটে চলেছে, পৃথিবী উপলব্ধি করছে নাড়ির টান। কষ্টসাধ্য হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই তাদের নিরন্তর পথচলা অব্যাহত। ক্রমেই তারা সৌরজগৎ ছেড়ে অনন্ত-অসীমে হারিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বার্তা, যদি কোনো দূর-গ্রহের কারও সাক্ষাৎ মেলে! তবে একটি প্রশ্ন এখন জোরালোভাবে সামনে আসছে, এভাবে আর কতকাল তারা পথ চলতে পারবে?

কথা হচ্ছিল দুই ‘ভয়েজার বোন’কে নিয়ে। এখন তারা পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে যাওয়া মনুষ্যসৃষ্ট বস্তু। প্লুটোনিয়াম পুড়িয়ে উৎপন্ন হচ্ছে তাপবিদ্যুৎ, যা তাদের চালিকাশক্তি। অসীমের যাত্রাপথে প্রতিবছর তারা প্রত্যেকে চার ওয়াট শক্তি হারায়। বিজ্ঞানীরা চান তাদের যাত্রা যেন না থামে। এ জন্য জ্বালানি যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, পৃথিবী থেকে নাসার বিজ্ঞানীরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে তারা এরই মধ্যে যান দুটির বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছেন।

১৯৭৭ সালে ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ আকাশে ওড়ানো হয়। প্রাথমিকভাবে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু একসময় তারা সৌরজগতের সীমা পেরিয়ে ছুটতে শুরু করে অনন্ত মহাশূন্যের পানে। বর্তমানে ভয়েজার-১ পৃথিবী থেকে আড়াই হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে; আর ভয়েজার-২ আছে ২ হাজার ১০০ কোটি কিলোমিটার দূরে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির। ভয়েজার-১ এর কাছে একটি সংকেত পাঠাতে সময় লাগে ২৩ ঘণ্টার বেশি। আর ভয়েজার-২ সংকেত পায় ১৯ ঘণ্টায়। 

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণাগার থেকে নাসার বিজ্ঞানীরা ভয়েজার-১ এর একটি যন্ত্রাংশ বন্ধ করে দেন। ২৪ মার্চ ভয়েজার-২ এরও একাংশ বন্ধ করার কথা । ভয়েজাররা যখন যাত্রা শুরু করে, তখন সৌরজগতের শনি, বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুন নিয়ে গবেষণা চালানোর জন্য প্রতিটিতে ১০টি যন্ত্র সংযুক্ত করা হয়। এগুলোর প্রতিটির কাজ পৃথক।

২০১২ সালে ভয়েজার-১ ইন্টারস্টেলার বা সৌরজগতের বহির্মণ্ডল অতিক্রম করে। এর মধ্য দিয়ে মানব ইতিহাসে প্রথম কোনো মহাকাশযান অনন্ত মহাবিশ্বের পথে রওনা হয়; ছুটতে থাকে অজানা গন্তব্যে। ২০১৮ সালে ভয়েজার-২ একইভাবে, তবে ভিন্ন দিকে রওনা করে। এ দুটিই নিয়ে যাচ্ছে কিছু রেকর্ড– পাখির কূজন, শিশুর কান্না, সংগীতসহ জাগতিক নানা শব্দ। এগুলো কি আদৌ ‘কারও’ কাছে পৌঁছাবে? সেই ‘কারও’র কি আসলে অস্তিত্ব আছে?   

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভয়েজার-১ এর মেগনেটোমিটার ও প্লাজমা ওয়েব সাবসিস্টেম চলতি বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। পরে এটি বন্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে ভয়েজার-২ তার মেগনেটোমিটার ও প্লাজমা ওয়েব সাবসিস্টেম আগামী বছর পর্যন্ত চালু রাখবে। এসব যন্ত্র একে একে বন্ধ হওয়ায় ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে ‘ভয়েজার বোনেরা’। তবে আরও কয়েক বছর হয়তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।

ভয়েজার প্রকল্পের বিজ্ঞানী লিন্ডা স্পিলকার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রতি মিনিটে ভয়েজাররা মহাশূন্যের নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে, যেখানে অতীতে কোনো মহাকাশযান যায়নি।’ এ দুই ভয়েজার আর কতদূর যাবে, তাও সুনির্দিষ্ট নয়। সূত্র: নাসা, সায়েন্স অ্যালার্ট।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স রজগত র ভয় জ র ১ ভয় জ র ২ অনন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সৌরজগতের নতুন বামন গ্রহ নিয়ে এত আলোচনা কেন

 আমাদের সৌরজগতের অচেনা ও অন্ধকার প্রান্তে ‘প্ল্যানেট নাইন’ নামের বিশাল ও রহস্যময় গ্রহ লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানী। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে কল্পিত এই প্ল্যানেট নাইন গ্রহের সন্ধান করছেন তাঁরা। গ্রহটির সন্ধান পাওয়া না গেলেও সৌরজগতের অচেনা ও অন্ধকার প্রান্তে একটি নতুন বামন গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। নতুন এই বামন গ্রহের অস্তিত্ব প্ল্যানেট নাইন তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। আর তাই বামন গ্রহটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নেপচুনের অপর পাশে বরফের পাথরের অদ্ভুত, গুচ্ছবদ্ধ কক্ষপথ ইঙ্গিত দেয় সেখানে বড় কিছু আছে। এই বড় কিছুর মধ্যে প্ল্যানেট নাইনও থাকতে পারে। সেই এলাকাতেই ‘২০১৭ ওএফ২০১’ নামের বামন গ্রহের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই গ্রহটি প্রায় ২৫ হাজার বছরে নিজ কক্ষপথে আবর্তন করায় পৃথিবী থেকে খুব কম সময়ের জন্য পর্যবেক্ষণ করা যায়।

নতুন বামন গ্রহটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির বিজ্ঞানী সিহাও চেং বলেন, এই বামন গ্রহ প্লুটোর চেয়ে তিন গুণ ছোট হলেও বামন গ্রহ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট বড়। গ্রহটির দীর্ঘ কক্ষপথ রয়েছে। পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্বের ১ হাজার ৬০০ গুণের বেশি দূরত্বে অবস্থান করছে গ্রহটি।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে প্লুটোকে বামন গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়। সৌরজগতে সব মিলিয়ে আরও চারটি বামন গ্রহ রয়েছে। নতুন বামন গ্রহটি এই তালিকায় শিগগিরই যুক্ত করা হবে। জেমস ওয়েব, হাবল ও আলমা টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্রহটির অবস্থান শনাক্ত করা বিজ্ঞানী স্যাম ডিন বলেন, বামন বস্তুটি সৌরজগতের আকর্ষণীয় আবিষ্কারের মধ্যে একটি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌরজগতের নতুন বামন গ্রহ নিয়ে এত আলোচনা কেন