পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুটের অভিযোগ
Published: 27th, April 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের চার শতাধিক বই লুটের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় তারা জাফর ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন লেখকের প্রায় চার শতাধিক বই লুট করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন অভয়ারণ্য পাঠাগার নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে দিনে-দুপুরে যুবককে হত্যা, অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট
কক্সবাজারে আবারো গুলি ছুড়ে গরু লুট
সেখানে তিনি লিখেন, ‘ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভণ্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।’
ওইদিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এসময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। তারা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় করে নিয়ে যায়।
পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার পর যুব খেলাফত মজলিসের নেতা ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জয়বাংলা কর্মসূচী। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।’
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ২০-২৫ জন হুজুর পাঠাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এসময় তারা ভেতরে ঢুকেই বলে, ওই, সব বই ব্যাগে তুল। এঁনে কোনো বই থাকব না। জাফর ইকবাল নাস্তিক, জাফর ইকবালের সব বই নে। এখান থেকে মানুষ নাস্তিকের বই পড়ে। এসময় মব সৃষ্টিকারী আরেকজন বলে, তোদের এ পাঠাগার থাকবো না। তোদের এখানে জাফর ইকবালের বই থাকবো ক্যা, প্রথম আলোর বই থাকবো ক্যা। এটা উপর থেকে নির্দেশ আছে ভেঙে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার।’’
দুর্জয় বলেন, “এই বলে বইগুলো সব নিতে থাকে তারা। পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে থাকে। তখন থানার কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে এখানে আসেন। তারাও তাদেরকে নানা প্রশ্ন করেন। তখন হামলাকারীরা বুঝতে পারে তারা থানার লোক। তখন গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে তারা পুড়িয়ে না দিয়ে চার শতাধিক বই লুটপাট করে।”
“এর আগে, ২০২২ সালেও অভয়ারণ্য পাঠাগারে রাতের অন্ধকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন আমরা জানতাম না কে আগুন দিয়েছিল। থানা কর্তৃপক্ষ আর বিষয়টি নিয়ে আগায়নি।”- যোগ করেন তিনি।
পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, “রাতে তারা পাঠাগারের বই লুটপাট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু, পুলিশের উপস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বইগুলো নিয়ে গেছে। এখনও বইগুলো উদ্ধার হয়নি। তবে জানতে পেরেছি বইগুলো ইউএনও অফিসে রয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন বলেন, “পাঠাগারটির সদস্যরা ইসলামবিদ্বেষী লেখা ফেইসবুকে পোস্ট করত। পাঠাগারে হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন লেখকের বই ছিল যেগুলোতে নারীদের অধিকার আর ইসলাম বিদ্বেষী লেখা ছিল। সেসব বই নিয়ে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছি।”
এ বিষয়ে ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘‘কিছু লোকজন পাঠাগার থেকে হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের বই নিয়ে এসে ইউএনও অফিসে রেখেছে। তাদের দাবি, ওই লেখকরা নাস্তিক। কতগুলো বই নিয়েছে সেটা জানি না। রবিবার ইউএনও কার্যালয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’’
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
ঢাকা/কাওছার/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই বই ন য় বই ল ট ইসল ম বইগ ল ধনব ড় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।