বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করে নাই, ত্যাগ স্বীকার করে নাই। আর কোনো মহামানব কোনো দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে, তার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অতীতেও অনেক মহামানব তৈরি করা হয়েছে, যার ফলাফল কী হয়েছে, সেটা দেশের মানুষ দেখতে পেয়েছে। এখানে ব্যক্তিবিশেষের বিষয় নয়, কোনো ‘মহামানব’ তৈরির জন্য মানুষ জীবন দেয়নি, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরাকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকারের একটি বক্তব্য নিয়ে আজ প্রশ্নের এ জবাব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু। সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেতে দাও। আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি।’

এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি দল পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে, ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের জন্য।’

এ ছাড়া ওই সব রাজনৈতিক দল সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেই সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়ার ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন আমীর খসরু। জনগণ বলতে কারা, এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘জনগণ বলতে যদি কোনো একটা বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী, যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করেছে.

..এটা তো কারও বুঝতে কষ্ট হওয়ার তো কোনো কারণ নাই।’

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য ‘গত ১৬ বছরের যুদ্ধ ছিল’ উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে, সেটা যেই সরকারই হোক।’

পরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পক্ষে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। তাতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে যে প্রতিশ্রুতি বা বক্তব্য দিয়েছেন, তার ব্যত্যয় হবে না। প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকের বক্তব্যকেই পুনরায় ঘোষণা দিয়েছেন, জুনের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই, জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন করে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়।’

তিন দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তাঁর নেতৃত্বে দলটির লিয়াজোঁ কমিটি সমমনা তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। বেলা ৩টায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) সভাপতি আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল, বিকেল ৪টায় আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মশিউজ্জামনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং বিকেল ৫টায় পিপলস পার্টির সহসভাপতি নাজমা আক্তারের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুও উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স গণতন ত র র জন য কম ট র সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ২২ জুন পাসের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই ২২ তারিখের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করা হোক। আমাদের এখন যেসব সংস্কার কমিটিগুলো রয়েছে তারা যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো অল্প করেও যদি বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলেও বাজেটে কিছুটা নতুনত্ব আসতো। সংস্কার কমিশনগুলো কি স্রেফ অলঙ্কার হিসেবে রয়েছে নাকি, আমার জানা নেই। আমি চাই, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হোক। এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে যে সুদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এটা যদিও বর্তমান সরকারের দোষ না।এটার জন্য আগের সরকারই দায়ী।”

আরো পড়ুন:

নির্দেশনামূলক বাজেট দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব‍্যর্থ: এবি পার্টি

প্রস্তাবিত বাজেট নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন: জিএম কাদের

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকার মেগা প্রকল্প থেকে বের হতে চায়, এটা তাদের প্রত্যাশা। কিন্তু যেসব মেগা প্রকল্প এখন চলমান রয়েছে, সেগুলোরও একটি পর্যালোচনা করতে হবে। উন্নয়ন নাম দিয়ে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বিলাসী ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক। যেমন-রূপপুর, মাতারবাড়ি, রামপাল, এসব প্রকল্প থেকে সরকারের বের হয়ে আসার কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এখন থেকে বের হওয়ার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিতে পারতো, তা হলো জাতীয় সক্ষমতার উন্নয়নের বিকাশ ঘটানো। আর এই বিকাশ ঘটানো হলে অনেক কম দামে আমরা গ্যাস পাব, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি রয়েছে তা আর দিতে হবে না। পরিবেশ বিনাশী কোনো প্রকল্পেও যেতে হবে না সরকারের।”

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “তবে দুঃখজনক যে, বর্তমান সরকার যে বাজেট উপস্থাপন করেছে, তাতে এই ধরনের পরিকল্পনা নেই। বাজেটে আগের ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন শুধু শিরোনামে দেখা যায়, বাস্তবতায় তা হলো জনগণের জীবন বিপণ্নকারী।”

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন লেখক কল্লোল মোস্তফা, গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ