ঢালাও আসামি ন্যায়বিচারের অন্তরায়
Published: 29th, April 2025 GMT
গত বছরের জুলাই–আগস্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মামলার নামে যখন ঢালাও আসামি করা হয়, ব্যক্তিস্বার্থে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা থাকে, তখন বিচার হয়ে পড়ে অনিশ্চিত।
২৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় জুলাই আন্দোলনের মামলা নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ৪০টি মামলার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী হিসেবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না। আবার মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলেও অর্থ আদায় করা হয়েছে। এমনকি স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তির ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে ৭৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এটা কেবল অনৈতিক নয়, অমার্জনীয়ও।
২১টি মামলার ক্ষেত্রে আগে বা পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি, অন্যান্য ৯০০টি।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢালাও মামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
এরপরও পরিস্থিতির ইতরবিশেষ ঘটেনি। আইজিপি বাহারুল আলম স্বীকার করেছেন, অপরাধ হয়তো করেছে ৫-১০ জন, তার সঙ্গে আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অভিনেতা ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাকে ‘ডিপলি ডিস্টার্বিং’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু এত সব সতর্কতার পরও হয়রানিমূলক মামলার নামে গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেমে নেই। আরও উদ্বেগজনক ঘটনা হলো অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামির চেয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে করা মামলার বিষয়ে পুলিশ বেশি তৎপরতা দেখিয়ে থাকে।
যে ৪০টি মামলা নিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধান করেছে, সেগুলোর এজাহারে উল্লেখ করা ১১ বাদীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন অথবা ভুয়া ঠিকানা দিয়েছেন। ফলে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা বাদীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ১৪ জন বাদী জানিয়েছেন, অন্য কেউ তাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, মামলার কাগজে তাঁদের কাছ থেকে কেবল সই নেওয়া হয়েছে। আসামির নাম দিয়েছেন অন্যরা।
একই ঘটনায় শত শত আসামি দেওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগ আমলের গায়েবি মামলার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সেসব মামলার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং নিজেদের অপকর্ম আড়াল করা। এখনো যদি সেই ধারায় মামলা চলে, তাহলে কখনোই বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ধারায় এগোবে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়, তাহলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতেই হবে। কেননা, এসব ঢালাও মামলা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত
মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা
গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির।
আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।
ঢাকা/শাহীন/রফিক