একদিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) মসজিদে নববিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ এক রোমান ব্যবসায়ী এসে ঠিক তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ’। ওমর ফারুক (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, কী হলো তোমার?’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলমান হয়েছি।’
ওমর (রা.
ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন আয়াত সেটি?’
রোমান ব্যবসায়ী আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে সাবধান থাকে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৫২)
আয়াতটি পড়ার পর রোমান ব্যবসায়ী আয়াতের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে বিষয়টি তার মনে দারুণভাবে রেখাপাত করেছে। তিনি বললেন, ওই আয়াতে চারটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
১. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে’ এটা আল্লাহর ফরজ বিধানাবলির সঙ্গে সম্পর্কিত। ২. ‘যে ব্যক্তি রাসুলের অনুসরণ করে’ এটা নবীর সুন্নতের সঙ্গে সম্পর্কিত। ৩. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে’ এটি অতীত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ অতীত জীবনে যত অপরাধ হয়েছে, তার জন্য আল্লাহকে ভয় করে। ৪. ‘যে অবাধ্য পথ পরিহার করে তাকওয়ার পথে চলে’ এটি ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কিত। কারও মধ্যে যখন এই চারটি বিষয় সন্নিবেশিত হবে, তখন সে-ই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে পারবে। কারণ, এ চারটি বিষয়ের পুরো ইসলাম চলে এসেছে।
দীনের সব বিষয় ছোট্ট একটি আয়াতে দেখে তার মন দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছে।
ওমর (রা.) রোমান ব্যবসায়ীর এ কথা শুনে বলেন যে, নবীজির (সা.) কথায় এর সত্যতা আছে। কারণ, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে সংক্ষিপ্ত শব্দ অথচ তার অর্থ ব্যাপক, এমন কথা বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০৫৪)
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম ন ব যবস য় আল ল হ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক
‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’
কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।
কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।
দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।
গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।