অস্থির সময় পার করছে মিডিয়াঙ্গন। যেসব শিল্পী এক সময় টেলিভিশন পর্দা, সিনেমা হল কিংবা মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছেন, আজ তাদের অনেকেই আড়ালে। অনেকে রাজনীতির মারপ্যাচে আটকেছেন, মামলায় জড়িয়েছেন, কেউ পারিবারিক টানাপোড়েন, কেউ আবার সংসারে জড়িয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন আলো ঝলমলে জগৎ থেকে। ফলে বিনোদন জগৎ এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। 
রাজনৈতিক মামলা-হামলা ও হয়রানি: সৃজনশীলতার মৃত্যু?

অভিনয়শিল্পী সমাজের আয়না। কিন্তু যখন তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং সেই আয়নায় দাগ পড়ে তখন শিল্পী কার্যত থেমে যান। গত কিছু বছরে আমাদের দেশে বহু নামকরা শিল্পী রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়েছেন। কেউ সরকারবিরোধী মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন, কেউ আবার দলের কোন্দলে পড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি তাদের ক্যারিয়ার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

সম্প্রতি দেশের ১৭ জন খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ফারিয়া, জায়েদ খান, অপু বিশ্বাস,আশনা হাবিব ভাবনা, আজিজুল হাকিম, নিপুণ, শাহনূর, জ্যোতিকা জ্যোতি, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তানভিন সুইটি, জাকিয়া মুন, সাইমন সাদিক, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহানসহ ১৭জন। এই ঘটনায় মিডিয়াঙ্গনে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। অভিনেতা সিদ্দিকের ওপর হামলা এবং পরে তাকে থানায় সোপর্দ করার ঘটনা গোটা মিডিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্টে করেছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম বলেন, “এভাবে মামলা দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকারের, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা।”

এর আগে শাহরিয়ার নাজিম জয় ও জায়েদ খানের নামে মামলা করা হয়। এসব শিল্পীর মধ্যে কেউ কেউ অতিকথনের কারণে আবার কেউ রাজনৈতিক দল সমর্থন করার কারণে মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। এর উল্টোটাও ঘটছে। মনির খান, আসিফ আকবর, কনকচাঁপা, বেবি নাজনিনসহ বেশ কিছু শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা হয়ে ছিলেন। কালো তালিকা করে রাখা হয়েছিলো একঝাঁক তারকাদের। শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে এসব কখনও কাম্য নয়। 

রাজনৈতিক মামলা ছাড়াও ব্যক্তিগত ইস্যু ঘিরেও মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়েছেন অনেকে। পরীমণি, মাহিয়া মাহি প্রমুখ তারকা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা জটিলতা নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাদের পেশাগত ব্যস্ততা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিল্পীদের সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। 

এই পরিস্থিতি এক ভয়ানক ট্রেন্ডের দিকে ইঙ্গিত করে—‘ভয়ের সংস্কৃতি’। যেখানে একজন শিল্পী স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে ভয় পান, কারণ তিনি জানেন, পরদিন হয়তো তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যা সৃষ্টিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এভাবে একে একে নিভে যাচ্ছে তারার আলো। রাজনৈতিক চাপ, সামাজিক হয়রানি, এবং ব্যক্তিগত দুর্ভোগ মিলে আজকের অনেক শিল্পী মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। নাটক কিংবা সিনেমায় এখন শিল্পী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ করে নতুন শিল্পীও তৈরি করা সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় সংস্কৃতি অঙ্গন তারকা শূন্য হয়ে পরবে।   

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অপরাধীর বিচার চাওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংহতি, আইনি সহায়তা, এবং সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে নিরাপরাধ তারকাদের ফিরে আসার পথ সুগম করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

ব্যক্তিগত জীবনের সংকট: স্ক্যান্ডেল, বিচ্ছেদ, সামাজিক লজ্জা

মিডিয়া সবসময়ই তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দিতে ভালোবাসে। সম্পর্কের টানাপোড়েন, বিচ্ছেদ, অতীত প্রেম, এমনকি ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় একজন শিল্পী সহজেই হয়ে উঠতে পারেন ‘ভুলে যাওয়া নাম’। অনেকে এই কারণেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। 

সংসার জীবন: ক্যারিয়ার বনাম পরিবার

অনেক প্রতিভাবান নারী শিল্পী বিশেষ করে সংসার জীবনে ঢুকে পড়ার পর মিডিয়া থেকে সরে দাঁড়ান। মাতৃত্ব, দায়িত্ব, পারিবারিক সীমাবদ্ধতা— এসব তাদের আবার পর্দায় ফেরার পথ কঠিন করে তোলে। এই তালিকায় রয়েছেন মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, মাহি, পরীসহ অনেকেই। পুরুষ তারকার ক্ষেত্রেও সংসারের দায়িত্ব, জীবিকা নির্বাহের বাস্তবতা তাদের পেছনে টেনে রাখে।

ফিরে আসা কি সম্ভব?

শিল্পী কখনোই পুরোপুরি হারিয়ে যান না। সুযোগ, সময় আর সঠিক প্ল্যাটফর্ম পেলে তারা আবার ফিরতে পারেন। কিছু কিছু উদাহরণ আছে যেখানে শিল্পীরা দীর্ঘদিন পর আবার ফিরেছেন, এবং দারুণভাবে সফলও হয়েছেন। এই ‘নিভে যাওয়া তারা’রা হারিয়ে যাননি, শুধু সময় আর সমাজ তাদের আলো কেড়ে নিয়েছে। সহানুভূতি এবং একটা ভালো গল্প বলার সুযোগ পেলে অনেক তারকাই ফিরে আসবেন। 

ঢাকা/তারা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

রঙিন ঝলমলে আকাশ থেকে নিভে যাচ্ছে তারার আলো

অস্থির সময় পার করছে মিডিয়াঙ্গন। যেসব শিল্পী এক সময় টেলিভিশন পর্দা, সিনেমা হল কিংবা মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছেন, আজ তাদের অনেকেই আড়ালে। অনেকে রাজনীতির মারপ্যাচে আটকেছেন, মামলায় জড়িয়েছেন, কেউ পারিবারিক টানাপোড়েন, কেউ আবার সংসারে জড়িয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন আলো ঝলমলে জগৎ থেকে। ফলে বিনোদন জগৎ এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। 
রাজনৈতিক মামলা-হামলা ও হয়রানি: সৃজনশীলতার মৃত্যু?

অভিনয়শিল্পী সমাজের আয়না। কিন্তু যখন তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং সেই আয়নায় দাগ পড়ে তখন শিল্পী কার্যত থেমে যান। গত কিছু বছরে আমাদের দেশে বহু নামকরা শিল্পী রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়েছেন। কেউ সরকারবিরোধী মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন, কেউ আবার দলের কোন্দলে পড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি তাদের ক্যারিয়ার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

সম্প্রতি দেশের ১৭ জন খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ফারিয়া, জায়েদ খান, অপু বিশ্বাস,আশনা হাবিব ভাবনা, আজিজুল হাকিম, নিপুণ, শাহনূর, জ্যোতিকা জ্যোতি, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তানভিন সুইটি, জাকিয়া মুন, সাইমন সাদিক, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহানসহ ১৭জন। এই ঘটনায় মিডিয়াঙ্গনে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। অভিনেতা সিদ্দিকের ওপর হামলা এবং পরে তাকে থানায় সোপর্দ করার ঘটনা গোটা মিডিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্টে করেছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম বলেন, “এভাবে মামলা দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকারের, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা।”

এর আগে শাহরিয়ার নাজিম জয় ও জায়েদ খানের নামে মামলা করা হয়। এসব শিল্পীর মধ্যে কেউ কেউ অতিকথনের কারণে আবার কেউ রাজনৈতিক দল সমর্থন করার কারণে মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। এর উল্টোটাও ঘটছে। মনির খান, আসিফ আকবর, কনকচাঁপা, বেবি নাজনিনসহ বেশ কিছু শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা হয়ে ছিলেন। কালো তালিকা করে রাখা হয়েছিলো একঝাঁক তারকাদের। শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে এসব কখনও কাম্য নয়। 

রাজনৈতিক মামলা ছাড়াও ব্যক্তিগত ইস্যু ঘিরেও মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়েছেন অনেকে। পরীমণি, মাহিয়া মাহি প্রমুখ তারকা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা জটিলতা নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাদের পেশাগত ব্যস্ততা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিল্পীদের সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। 

এই পরিস্থিতি এক ভয়ানক ট্রেন্ডের দিকে ইঙ্গিত করে—‘ভয়ের সংস্কৃতি’। যেখানে একজন শিল্পী স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে ভয় পান, কারণ তিনি জানেন, পরদিন হয়তো তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যা সৃষ্টিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এভাবে একে একে নিভে যাচ্ছে তারার আলো। রাজনৈতিক চাপ, সামাজিক হয়রানি, এবং ব্যক্তিগত দুর্ভোগ মিলে আজকের অনেক শিল্পী মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। নাটক কিংবা সিনেমায় এখন শিল্পী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ করে নতুন শিল্পীও তৈরি করা সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় সংস্কৃতি অঙ্গন তারকা শূন্য হয়ে পরবে।   

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অপরাধীর বিচার চাওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংহতি, আইনি সহায়তা, এবং সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে নিরাপরাধ তারকাদের ফিরে আসার পথ সুগম করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

ব্যক্তিগত জীবনের সংকট: স্ক্যান্ডেল, বিচ্ছেদ, সামাজিক লজ্জা

মিডিয়া সবসময়ই তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দিতে ভালোবাসে। সম্পর্কের টানাপোড়েন, বিচ্ছেদ, অতীত প্রেম, এমনকি ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় একজন শিল্পী সহজেই হয়ে উঠতে পারেন ‘ভুলে যাওয়া নাম’। অনেকে এই কারণেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। 

সংসার জীবন: ক্যারিয়ার বনাম পরিবার

অনেক প্রতিভাবান নারী শিল্পী বিশেষ করে সংসার জীবনে ঢুকে পড়ার পর মিডিয়া থেকে সরে দাঁড়ান। মাতৃত্ব, দায়িত্ব, পারিবারিক সীমাবদ্ধতা— এসব তাদের আবার পর্দায় ফেরার পথ কঠিন করে তোলে। এই তালিকায় রয়েছেন মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, মাহি, পরীসহ অনেকেই। পুরুষ তারকার ক্ষেত্রেও সংসারের দায়িত্ব, জীবিকা নির্বাহের বাস্তবতা তাদের পেছনে টেনে রাখে।

ফিরে আসা কি সম্ভব?

শিল্পী কখনোই পুরোপুরি হারিয়ে যান না। সুযোগ, সময় আর সঠিক প্ল্যাটফর্ম পেলে তারা আবার ফিরতে পারেন। কিছু কিছু উদাহরণ আছে যেখানে শিল্পীরা দীর্ঘদিন পর আবার ফিরেছেন, এবং দারুণভাবে সফলও হয়েছেন। এই ‘নিভে যাওয়া তারা’রা হারিয়ে যাননি, শুধু সময় আর সমাজ তাদের আলো কেড়ে নিয়েছে। সহানুভূতি এবং একটা ভালো গল্প বলার সুযোগ পেলে অনেক তারকাই ফিরে আসবেন। 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ