রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (রাকসু) এবং অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (রুয়া) যথা সময়ে নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; রুয়া নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না; রাকসু নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না; একশান টু একশান, ডাইরেক্ট একশান; সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া; সিন্ডিকেট না রাকসু, রাকসু রাকসু; সিন্ডিকেটের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না; ইলেকশন না সিলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় বক্তারা বলেন, রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ থেকে নির্বাচনের আচরণবিধি সংশ্লিষ্ট একটি তারিখ ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার নির্দিষ্ট তারিখও পার হয়ে গেছে। যে গোষ্ঠী রুয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে একই গোষ্ঠী রাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। রুয়া নির্বাচনে আমরা দেখতে পারবো রাকসু নির্বাচন কেমন হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, রুয়া নির্বাচন ১০ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এটি নিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমরা রাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা বরদাশত করবো না। আপনারা জানেন রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার তারিখ অতিক্রম হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এটি ধরে নেব- যে গোষ্ঠী রুয়া নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে তারাই রাকসু নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থী সমাজের ওপর সন্ত্রাসবাদ, আধিপত্যবাদের রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেক প্রশাসন রাকসু, ডাকসুসহ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বন্ধ রেখেছে। কোনোভাবে যদি রুয়াকে তারা বানচাল করতে পারে তাহলে রাকসু বাস্তবায়নও সম্ভব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি রুয়াকে বানচাল করার অপচেষ্টা রাকসুকে বানচাল করার অপচেষ্টার একটা বড় অংশ। রুয়া নির্বাচনে আমরা দেখতে পারবো রাকসু নির্বাচন কেমন হবে। রুয়া নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতটা গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের সামনে নিজেদের তুলে ধরতে পারবে। আমরা একটা বিষয় খেয়াল করছি বিগত ২৮ তারিখে রাকসুর ভোটার তালিকা প্রকাশ করার তারিখ ছিল কিন্তু কোনো এক বাধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত সে ভোটার তালিকা সামনে আনতে পারেনি। অনতিবিলম্বে রাকসুর ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক আতাউল্লাহ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি বিশেষ দল রুয়া নির্বাচন বানচাল করার জন্য ইলেকশন বাদ দিয়ে সিলেকশনের পায়তারা করতেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশে নিয়ে যেতে চায়। তাদের স্পষ্ট বলে দিতে চাই এই অপরাজনীতি আপনারা অতীতে করে গেছেন, এখন করার চেষ্টা করলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা আপনাদের সামনে রুখে দাঁড়াবে। মতিহারের এই চত্বরে পূর্বের মতো দখলদারিত্বের রাজনীতি শিক্ষার্থীরা আর হতে দিবে না। রুয়া নির্বাচন ১০ তারিখেই দিতে হবে, সকল ষড়যন্ত্রের কালো হাত শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করবে।

বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশের সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক সমন বয়ক ল কশন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে

মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।

মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তি

পৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)

আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭

মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।

এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্ব

মৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।

এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)

হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)

মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়

ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।

তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।

বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।

প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।

আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়া

মৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)

মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।

নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।

হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১

সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)

এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।

মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)

মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)

ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।

আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ